Skip to main content

বই রিভিউ #২৭: সুন্দর সম্পর্ক: বিনিময়ে জান্নাত



বই রিভিউ #২৭

বই: সুন্দর সম্পর্ক

বিনিময়ে জান্নাত

লেখক: ইমাম ইবনুল জাওযি রাহিমাহুল্লাহ 


  • বইঃ সুন্দর সম্পর্কঃ বিনিময়ে জান্নাত
  • লেখকঃ ইমাম ইবনুল জাওযি রাহিমাহুল্লাহ
  • অনুবাদকঃ আবদুল্লাহ আল মাসউদ
  • প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল বায়ান
  • পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৭৬
  • মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা
  • বিষয়ঃ পরিবার ও সামাজিক জীবন

ইসলাম কেবল নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়। ইসলাম একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিধান রেখেছে যা সমুন্নত ও শ্রেষ্ঠ। বর্তমান সমাজে যখন প্রযুক্তি ও ভোগবাদ মানুষে-মানুষের সম্পর্ককে ঠুনকো করে দিচ্ছে, ছিন্ন করছে, তখন কেবল ইসলামের সুশীতল ছায়ায় ফিরে যাওয়ায় বাঁচাতে পারে সব সম্পর্কগুলোকে।

বই সম্পর্কেঃ

বিখ্যাত ও কালজয়ী লেখক ইমাম ইবনুল জাওযি রাহিমাহুল্লাহর লেখা "কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ" গ্রন্থের বাংলায় অনুবাদ পাঠকসমাজকে উপহার দিয়েছে মাকতাবাতুল বায়ান। সবুজ রঙের হার্ডকভার বইয়ে মূলত এসেছে মানবজীবনের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবদ্ধ রুপরেখা।

দূরদর্শী লেখক তাঁর লেখনীর সূচনা করেছেন জীবনে গড়ে ওঠা প্রথম সম্পর্কের বুনন দিয়ে। তা হলো মা-বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক। মাতাপিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্বের আলোচনা হয়েছে কুর'আন,হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে। জ্ঞানগর্ভ আলোচনা গুলো প্রাঞ্জল করতে লেখক সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, তাবেইন,তাবে-তাবেইনদের জীবন থেকে তুলে ধরেছেন নানা উদাহরণ।

মাতাপিতার সাথে সম্পর্ক ও আদব-আচরণের বরখেলাফের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কতটা কঠোর সেই আলোচনা বাদ না দেওয়া বইকে দিয়েছে ব্যতিক্রমী এক আবেদন। পাঠক আদবহীন আচরণের শাস্তির ভয়াবহতা দেখে শিউরে উঠতে এখানে বাধ্য। মা-বাবার মৃত্যুর পরে সন্তানের করণীয়ও বলে দিয়েছেন লেখক। একজন আদর্শ সন্তান হয়ে উঠতে এই বইয়ের প্রথম তিন অধ্যায়ই যথেষ্ট ইংশা আল্লাহ।

জ্ঞানের ঝান্ডাধারী ইমাম ইবনুল জাওযি রাহিমাহুল্লাহ লিখতে ভুলে যাননি সামাজিক জীব মানুষের জীবনের অন্যান্য অধ্যায় নিয়ে। মূল বিষয়বস্তু আলোচনায় যে ধারাবাহিকতা এসেছে সম্পর্কের গাঢ়তার বিচারে তা চোখে পড়ার মতো। তাই মা-বাবার পরে এসেছে পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা।

ভাই,বোন,খালার সাথে সম্পর্ক রাখার কথা বলা হয়েছে হাদিস থেকে। আত্মীয়তার সম্পর্ক বা রাহিম নিয়েই হাদিস এসেছে তিন পৃষ্ঠা জুড়ে। এভাবে এসেছে প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক, এক মুসলিমের সাথে অন্য মুসলিমের সম্পর্ক নিয়ে লেখনী।

সবশেষে দান-সদাকার ফজিলতের উপর আলাদা একটা অধ্যায় রেখেছেন লেখক তাঁর বইয়ে। সেখানে তিনি এনেছেন এতিমদের দানের কথা,মিসকীন-বিধবাদের সাহায্যের কথা, ঋণ নিয়ে ইসলামের উদারতার কথা। এভাবেই "সুন্দর সম্পর্কঃবিনিময়ে জান্নাত" হয়ে উঠেছে এক নির্মল রচনা যা প্রতিটি মানব মনে সুশীতল পরশ বুলিয়ে দেয়।

পাঠ্যানুভূতিঃ

আজ আমরা মুসলিমরা আখলাকের ব্যাপারে খুবই উদাসীন। বাসার বাইরে মার্জিতভাবে চললেও আপনজন বিশেষ করে নিজের বাবা-মায়ের সাথে আমাদের সম্পর্কটাকে আমরা বেশি ইনফর্মাল বানিয়ে ফেলেছি,যা আবার দৃষ্টিকটু হয়ে যায় মাঝেসাঝে। এই উপলব্ধি থেকেই মা-বাবার সাথে আদব নিয়ে একটা বই খুঁজছিলাম। অবশ্যই আরিফ আজাদ ভাইয়ের "মা,মা ও বাবা" বই আছে। কিন্তু আমার মন ও মননের খিদে মেটে ইসলামিক ক্লাসিকাল লেখকদের লেখনী পড়ে। তাই খুঁজে, সাজেশন নিয়ে কেনা "সুন্দর সম্পর্কঃবিনিময়ে জান্নাত"।

অবশ্যই বই থেকে নতুন অনেককিছু শিখেছি আলহামদুলিল্লাহ। মা-বাবার সাথে আচরণ ও তাদের যত্নের ব্যাপারে ইসলামের শক্ত অবস্থান নিয়ে আবার জেনেছি। এবার জেনেছি গভীরে গিয়ে, ভালোমতো। মা-বাবার অবাধ্য হওয়ায় পাওয়া শাস্তির বাস্তব কাহিনীগুলো পড়ে আমার শরীরে কাঁটাও দিয়েছে।

সম্পর্কগুলো নার্চার করার ব্যাপারে ইসলামের দেওয়া বিধান পড়তে পড়তে কেবলই মনে হচ্ছিল "ইশ! আজ যদি ইসলাম তামাম জমিনে কায়েম থাকত। কতো সুন্দর হতো সব। কতো ঘনিষ্ঠ হতো সম্পর্কগুলো"। সত্যিই আমার বারবার এই কথাটায় মনে আসছিল। রোমাঞ্চিত হয়েছি ইসলামের বিধবা মেয়ের ভরণপোষণের জন্য বাবাকে সওয়াব দেওয়া হবে সেই হাদিস পড়ে, সদকার প্রতিদান একলক্ষ গুণ বেড়ে যাবে পড়ে। আরো কতোবার কত জায়গায় যে রোমাঞ্চিত হলাম। কিছু ভুল শুধরে নতুন প্রতিজ্ঞাও নিয়ে ছাড়ালো আমাকে এই বইয়ের লেখা আল্লাহর ইচ্ছায়। এমন বইকে ভালো না বেসে পারা যায়?

অনুবাদক আবদুল্লাহ আল মাসউদ ভাই খুবই চমৎকার অনুবাদ করেছেন। এতোটায় ঝরঝরে যে পড়ে মনে হলো খোদ ইমাম ইবনুল জাওযি রাহিমাহুল্লাহ বইটা মূলত বাংলায় লিখেছেন। বানানের ভুল চোখে পড়েনি যদ্দূর মনে পড়ে।

আর কভারটার এই সবুজের শেডটা এতো মাখোমাখো মাশা আল্লাহ! শেলফের শোভা বাড়াতে চাইলেও পাঠক বইটা কিনে ফেলতে পারে। অবশ্য তার পরে পড়তে হবে বইটার ভিতরের লেখা। নাহলে এই বইয়ের ভক্ত সে হবে কি করে?


Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...