সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন
Plan your first decade of Dhul Hijjah
#Spiritual
দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে।
জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি।
জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা:
সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন,
কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২)
ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।
হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে,
এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি” । (বুখারী: ৯৬৯, আবু দাউদ: ২৩৪৮, তিরমিয়ী: ৭৫৭, ইবনে মাজহ: ১৭২৭, মুসনাদে আহমাদ: ১/২২৪)
আমাদের কাজ কি?
আল্লাহ তা'য়ালার বান্দা হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, এই দিনগুলোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা। কারণ এই দিনগুলোর ইবাদাত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আর মানুষ মাত্রই তার সবচেয়ে প্রিয় সত্ত্বার আরো কাছের হয়ে উঠতে সেই সত্ত্বার প্রিয় কাজগুলো করতেই বেশি আগ্রহ বোধ করে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা কি আমাদের সবচেয়ে প্রিয় সত্ত্বা না? যাকে বলে একমাত্র প্রেমাস্পদ।
Where to start?
কথায় আছে, "If you fail to plan, you plan to fail"। আর আছে মাত্র এক বা দুইদিন। তাই প্রস্তুতি নেওয়াটা একটু তড়িঘড়ি করেই করতে হবে আমাদেরকে। কি কি করতে হবে বা আমরা কিভাবে এই দশদিনকে সাজাতে পারি, সেই আলোচনায় আজকে করব।
১. মানসিক প্রস্তুতি: এর নিচে দুইটা subcategory আছে।
- নিয়ত করা ও সেটা খালেস করা: সোজা কথায় আমাদের প্রথম কাজ হবে এই দশদিনের কাজগুলো কেবল আল্লাহ তায়ালার জন্যই আমরা করছি, এটা মনে মনে confirm করতে হবে। কাউকে দেখানোর জন্য না বা অন্য কোনো দুনিয়াবী লাভের জন্যও না। কেবল আল্লাহ তায়ালার রাজিখুশির জন্য আমরা এই দশদিন ইবাদাত করব ইংশা আল্লাহ।
- Prepare yourself: ইবাদাত করতে কষ্ট হবে। কেন? আপনি আপনার নফস (প্রবৃত্তি or instinct) যে আপনাকে কেবল খারাপ কাজের জন্য বলে বা আল্লাহকে মনে করা, তাঁর জিকির করা থেকে গাফেল (forgetful) করে রাখে, সেই নফসের সাথে যুদ্ধ করে আপনাকে এই দশদিন ইবাদাত করতে হবে। এই যুদ্ধ অবশ্যই কষ্টকর। তাই কষ্ট করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমাদের mindset হবে, "এই দশদিন আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য যত কষ্টই হোক ইবাদাতে কাটাবো ইংশা আল্লাহ"।
২. Plan your days: এই point টায় আমার কথা বলতে সবচেয়ে ভালো লাগে। কারণ এখানে আমাদের আসবে একটা planner এর কথা। না,না, ভয় পাবেন না। এর জন্য এখন আপনাকে কোনো page খুঁজতে বলব না plannee কেনার জন্য। আমরা ইংশা আল্লাহ planner বানাবো। তার আগে কথা হলো কেনো planner?
কেনো planner?
Planner আসলে একটা chart যেখানে আপনি আপনার To-do list বা কাজগুলো লিখে রাখেন। এখানে আপনার কাজগুলো Organised থাকে। ফলে যখন আপনি সেগুলো করতে যাবেন, তখন কিছু বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি হয়। আপনার একটা মানসিক প্রস্তুতিও হয়ে যায় planner টা বানাতে গেলে। কারণ আপনি জেনে যাচ্ছেন যে আপনাকে সামনে কোন কোন কাজ করতে হবে। তাছাড়া Planner টা কাছে থাকলে আপনার কাজগুলো করার জন্য ভিতর থেকে একটা ইচ্ছা কাজ করবে। সোজা কথায় আপনার procrastination period কমে যাবে। তো এমন অনেকগুলো উপকারের জন্যই Planner রাখলে বা তৈরি করে ব্যবহার করলে productivity বাড়ে।
তাহলে এবার আসুন,
কিভাবে Planner টা বানাবো?
আমরা বানাতে যাচ্ছি "First Ten Days of Dhul Hijjah Planner"। তো ছোট ছোট করে আমি step by step procedure বলছি।
- খাতা বা writing pad নিতে হবে এই step লিখতেও হাসি আসে।কিন্তু তাও এই step নিয়ে কথা আছে। সেটা হলো, আমরা অনেকেই অলসতার বশে যেনতেন একটা কাগজে to-do list বা planner বানাই। তারপর ঐ planner এর প্রতি আর আগ্রহ কাজ করে না সত্যি বলতে। আপনাকে আমি challenge দিয়ে বলতে পারি যে আপনার planner টা দেখতে যতো ভালো হবে, গোছানো হবে, তত আপনার আগ্রহ বাড়বে আপনার planner এর box গুলো টিক দিয়ে fill up করতে। এর জন্য আপনাকে artist হতে হবে না। কাটাছেড়া বাদ দিয়ে, পরিষ্কার ভাবে (মেয়েরা একটু decoration করতেই পারেন অবশ্য) লিখলেই দেখবেন দেখতে সুন্দর লাগে। So the first step is choosing the right notebook.
- Planner টা আসলে একটা chart আর আমাদের planner এ দশদিনের কাজ আর দিনগুলো থাকবে। তাই আড়াআড়ি (horizontally) আমরা দাগ কাটবো আমাদের কাজগুলোর জন্য আর লম্বালম্বি (vertically) ঘর হবে date লেখার জন্য। (check the 1st picture)
- আপনার কাজগুলো কোথাও একটা রাফ করে নিন, যেগুলো এই দশদিনে আপনি করবেন। অবশ্যই আমরা ইবাদাতে focus করছি। তো যেগুলো থাকতে পারে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, সুন্নত রোজা, জিকির (check the 1st picture for idea and points)। এগুলো আমাদের vertical ঘরের প্রথম column এ লিখব। উপরে প্রথম row এ লিখব date 1st Dhul Hijjah থেকে 9th Dhul Hijjah (চাইলে আপনারা 10th Dhul Hijjah বা ঈদুল আযহার দিনটাও add করতে পারেন)। Row, column বুঝতে সমস্যা হলে ১ম ছবিটা দেখুন।
- এরপর ফাঁকা ঘরগুলোই কিছু করবেন না। প্রতিদিন ঐ আমল করার পর এগুলোতে টিক দিবেন। ব্যাপারটা মজার না?
তাকবির আল-তাশরিক
জিলহজ্জ্বের ৯ তারিখ (আরাফার দিন) ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত একটা তাকবির পড়তে হয়। এটাকে বলে তাকবির আল-তাশরিক। তাকবিরটা হলো:
اللّٰهُ أَكْبَرُ ❁ اللّٰهُ أَكْبَرُ ❁ لَآ إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
وَاللّٰهُ أَكْبَرُ ❁ اللّٰهُ أَكْبَرُ ❁ وَلِلّٰهِ الْحَمْدِ
আল্লাহু আকবার- আল্লাহু আকবার- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু- ওয়াল্লাহু আকবার -আল্লাহু আকবার-ওয়ালিল্লাহিল হামদ
এই পাঁচদিন (আইয়ামে তাশরিক বা তাশরিকের দিনগুলোয়) প্রতি ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পরে কারো সাথে কোনো কথা বলার আগে বা দুনিয়াবী কাজে জড়ানোর আগে উপরের তাকবির ১ বার করে পড়া ওয়াজিব। ছেলেরা উচ্চস্বরে (audibly) পড়বে আর মেয়েরা নিঃশব্দে (silently) পড়বে।
Planner এ কিভাবে তাকবির আল-তাশরিক add করবেন?
আমি বলব, এটার জন্যও ২য় ছবির মতো একটা chart বানিয়ে ফেলুন। কিন্তু এবার box গুলোয় টিক দিবেন। সেই box গুলোয় যেই দিনে ও যেই ওয়াক্তে তাকবির আছে, সেই box গুলোয় টিক দিবেন। আর ১৩ তম দিনের মাগরিব আর এশার box এ cross দিবেন। আবার এমনও করতে পারেন যে ১৩ তারিখের মাগরিব আর এশার Box গুলোয় কেবল cross দিবেন। বাকি box আপনি প্রতি ওয়াক্তে ফরজ সালাতের পর তাকবির বলে তারপর টিক দিবেন। যেটা আপনার কাছে better লাগে।
উপরে আমার বানানো planner এর ছবি দিচ্ছি আপনাদের help করার জন্য। আমার কোনো আমল দেখানোর জন্য না। আল্লাহর কাছে রিয়া (লোক দেখানো আমল) থেকে আশ্রয় চাই।
যাবার আগে.....
উপরে planner বানানোর প্রতিটা step যতোটা সম্ভব explain করা যায়, সেটা করেছি। এটা এজন্য যেনো যে কখনো আগে planner বানানোর try করেনি, সেও যেনো কিছু benefit পায় আর বোঝে যে কিভাবে কি করতে হবে। অবশ্যই সবার style এক না। আপনার যেটা পছন্দ সেটায় আপনি করবেন। আমারটা sample হিসেবে রাখলেন ইংশা আল্লাহ।
আর আমি কোনো আলেমা নই বা professional কেউ না এই productivity শেখানোর ক্ষেত্রে। কিন্তু আমি productivity নিয়ে লিখতে ভালোবাসি। জানতে ভালোবাসি। তাই আপনাদেরকেও জানালাম। কারণ আমি চাই আরো অনেকে এভাবে productive way তে তাদের ইবাদাতের দিনগুলো কাটাক। এই চাওয়াটা কেবল আল্লাহ তা'য়ালাকে ভালোবেসে।
আল্লাহ আমার এই নগণ্য পরিশ্রমকে কবুল করুন। আমিন।
Important Links
১. জিলহজ্জ্ব মাসের দশদিন নিয়ে বিস্তারিত জানতে:
২. তাকবির আল-তাশরিকের মাসায়েল:
লেখাটা ভালো লেগে থাকলে সামনে আরো beneficial writings পেতে উপরে ডানের side bar থেকে follow option click করতে ভুলবেন না। শুকরিয়া!
অগ্রিম ঈদ মুবারক!
Comments
Post a Comment