Skip to main content

বই রিভিউ #২৮: নারী সাহাবিদের জীবনাদর্শ


বই রিভিউ #২৮

বই: নারী সাহাবিদের জীবনাদর্শ 

লেখক: মাওলানা আবদুস সালাম নদভি রহ,                   সাইয়েদ সুলাইমান নদভি রহ

  • বইঃ নারী সাহাবিদের জীবনাদর্শ 
  • লেখকঃ মাওলানা আবদুস সালাম নদভি রহ,                সাইয়েদ সুলাইমান নদভি রহ
  • প্রকাশনীঃ ইত্তিহাদ পাবলিকেশন
  • পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৪৪
  • মুদ্রিত মূল্যঃ ২৮০ টাকা 


পুরুষ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের নিয়ে কতশত বই। তাঁদের জীবন থেকে উৎসারিত আদর্শ নিয়ে লেখা কত রচনা আছে, কতো বয়ান আছে। এসবের মাঝে এক কোমল নারীমন নিশ্চয় খোঁজে নারী সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাদের নির্মল,শুভ্রতার গল্প শুনতে?

বই সম্পর্কেঃ 

উসওয়ায়ে সাহাবার মতো বই লেখার পর মাওলানা আবদুস সালাম নদভি রহ নারী সাহাবিদের জীবনগাঁথা নিয়ে স্বতন্ত্র এক বই লেখেন। সেই বইই আমাদের হাতে অনুবাদ করে তুলে দিয়েছে ইত্তিহাদ পাবলিকেশন "নারী সাহাবিদের জীবনাদর্শ" শিরোনামে।

দূরদর্শী দুই লেখক বিংশ শতাব্দী অর্থাৎ একশ বছর আগেই নারী সমাজে অমুসলিমদের হস্তক্ষেপে ইসলামের শিক্ষার শিকড় থেকে ছিটকে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করে লেখেন এই বই। যা আজ আরো বেশি প্রাসঙ্গিক, আরো বেশি জরুরত নিয়ে হাজির হয়েছে। 

জীবনের নানাদিকের কথা যেমন পর্দানশীলতা, ধৈর্য, ইবাদাত, দান-সদকা,ইলম,সাহসিকতা,নিজ সংসার জীবনে কর্তব্য, স্বামী-সন্তানের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি টেনে সেই সব ভূমিকায় নারী সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাদের উদাহরণ পেশ করা হয়েছে। প্রতি অধ্যায়ের শিরোনাম নির্বাচন খুবই প্রাসঙ্গিক। একইসাথে অনুচ্ছেদ গুলো নাতিদীর্ঘ এবং জরুরী আলোচনা বাদে অকারণে শব্দ বা বাক্যের ছড়াছড়ি নেই। এই বৈশিষ্ট্যটা দারুণ। সচরাচর বইয়ে লেখকের অতিরিক্ত কথা পড়ে পড়ে "নারী সাহাবিদের জীবনাদর্শ" বইয়ে ব্যতিক্রমী এই দিক সব পাঠকের চোখে পড়ার মতো। 

বইয়ে উঠে এসেছে নারী সাহাবি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাদের দ্বীন পালনের ব্যাপারে একনিষ্ঠতার কথাও। বিদ'আত থেকে বাঁচতে তাঁদের কর্মতৎপরতা, ভালো কাজে আদেশ ও খারাপ কাজে নিষেধে তাঁদের বলিষ্ঠ অবস্থান, দ্বীনের জন্য কা ফির, মুশরিকদের অকথ্য নির্যাতন সয়েও অটল থাকার বীরগাঁথা শুনিয়েছেন লেখকদ্বয় তাঁদের এই বইয়ের পাতায় পাতায়। 

এসেছে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি শুভ্র ভালোবাসার কথা কারণ তিনি একজন রাসূল। তাঁর আদেশ তলবে নারী সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নারাও যে পিছিয়ে ছিলেন না সেই আলোচনা এনেছেন লেখকদ্বয়। আর পাঠককে আশ্চর্য করার জন্য আছে ইসলামের উচ্চমার্গীয় শাস্ত্রজ্ঞানে নারী সাহাবিদের বিচরণের কথা। সেখানে অনন্য হয়য়ে আছেন আম্মিজান আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। অনুজ হয়ে আছেন আরো অনেক নারী সাহাবিরা। 

এমনি করে অনুপ্রেরণার অনেক অনেক উদাহরণে টইটুম্বর হয়ে আছে ১৪৪ পৃষ্ঠার এই বই। 

পাঠ্যানুভূতিঃ 

নিজে একজন মেয়ে হওয়ায় ইসলামের মহীয়সী নারীদের জীবনগল্প পড়তে ও তাঁদেরকে জানতে খুব ভালো লাগে আমার। বইটা কেনার সময়ে ওয়াফিলাইফের ওয়েবসাইটে গিয়ে সূচিপত্র দেখে আর ভিতরের কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়ে একেবারে মনে ধরে যায়। এক আপনজনকে হাদিয়া দিব বলে কিনে ফেলি।

আগেই বলেছি যে বইটাইয় প্রতিটা বিষয়ের আলোচনা ছিল পরিমাণে পরিমিত। তাই পড়ে খুব ভালো লেগেছে। সবকিছু নারী সাহাবি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাদের কাছ থেকে শিখছি যেন নতুন করে, এমন একটা ফিলিংস কাজ করছিল বই পড়ার সময়। ডেলিকেট ইউফোরিয়া বলা সবচেয়ে মানানসই হবে। 

তাছাড়া এতোদিন আম্মিজান আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা একজন মিষ্টি, চঞ্চল মেয়ে জেনে আসলেও তাঁকে অন্যভাবে এই বইয়ের পাতায় দেখে আম্মিজানের প্রতি আমার মুগ্ধতা আকাশ ছুঁয়েছে যেন। 

তবে আমার সাজেশন থাকবে যে ইসলামের নারীদের ব্যাপারে যাদের একটা কনক্রিট ধারণা আছে, তাদের এই বই পড়াটা উচিত। নাহলে কেবল ইসলামে আসা মানুষ পড়লে শেষের অধ্যায় পড়ে অনেক ভুল মেসেজ নিতে পারে। অবশ্য এখানে শরয়ী সম্পাদকের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি অধ্যায়ের শুরুর পৃষ্ঠায় ফুটনোটে যে ডিসক্লেইমার দিয়ে দিয়েছেন, এটা খুবই দরকারী ছিল। 

তাছাড়া অনুবাদকের প্রশংসাও করতে হবে। খুবই ঝরঝরে অনুবাদ। আমার তো মনে হচ্ছিল এই বই বাংলায়ই মূলত লেখা। মাশা আল্লাহ। প্রচ্ছদও বেশ সুন্দর আর বানান ভুল তেমন একটা চোখে পড়েনি। তরতর করে পড়ে ফেলেছি। সংগ্রহে রাখার জন্য ওয়ান অফ দ্য বেস্ট বই এটা বলায় যায়। 


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...