Skip to main content

বই রিভিউ #২৫: ঈমান পরিচর্যা

 


বই রিভিউ #২৫

বই: ঈমান পরিচর্যা 

লেখক: আব্দুর রাজ্জাক বিন আব্দুল মুহসিন বদর


  • বইঃ ঈমান পরিচর্যা
  • লেখকঃ আব্দুর রাজ্জাক বিন আব্দুল মুহসিন বদর
  • প্রকাশনীঃ ওয়াফি পাবলিকেশন
  • পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৪১
  • মুদ্রিত মূল্যঃ ২৭০ টাকা


 আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে একজন মুমিনের ঈমান সবসময় একই স্তরে থাকে না। সাগরের মতো ঈমানেও আছে জোয়ার-ভাটা। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন উপাদান বা প্রভাবকের কারণে ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। 


পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী বোঝে যে কখন তার ঈমানের পারদ নিচে নেমে যায়। তখন সে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজে। সেই পথের সন্ধান দিতে নিজ কলম ধরেছেন বিখ্যাত লেখক আব্দুর রাজ্জাক বিন আব্দুল মুহসিন বদর। খ্যাতনামা এই আলেম নিজের জ্ঞান ও অন্যান্য মনীষীদের বাণী একসাথে করে মলাটবদ্ধ করেছেন উম্মাহর কল্যাণস্বার্থে। আরবি থেকে সেই বইয়ের অনুবাদ বাঙালি পাঠক সমাজের হাতে তুলে দিয়েছে ওয়াফি পাবলিকেশন।


বই সম্পর্কেঃ 


"ঈমান পরিচর্যা" বইয়ে লেখক আব্দুর রাজ্জাক বিন আব্দুল মুহসিন বদর আলোচনা করেছেন বিস্তারিত ভাবে ঈমানের উপর বিভিন্ন প্রভাবক নিয়ে। প্রথমেই এসেছে ঈমানী যত্নে দরকারী নিয়ামকের কথা যেগুলো ঈমান বৃদ্ধির হাতিয়ার। উপকারী ইলম অর্জন, ইখলাসের সাথে নেক আমল করা, সৃষ্টিজগৎ নিয়ে চিন্তা ফিকির করা ইত্যাদি একজন বান্দার জন্য অভ্যন্তরীণ নিয়ামক নিয়ে আলোচনা এসেছে। কেবল হেডিং দিয়ে বলেই ছেড়ে দেওয়া হয়নি। বরং প্রতিটা নিয়ামকের প্রকারভেদ থাকলে সেগুলো ধরে ধরেও আলোচনা এসেছে। আলোচনা এসেছে কিভাবে এই নিয়ামকগুলো কাজ করে, কুর'আন, সুন্নাহে এই নিয়ামকের কার্যকারিতা সম্পর্কে কি কি কথা এসেছে এবং কিভাবে একজন মুমিন এই নিয়ামকের ব্যবহার নিশ্চিত করবে- সব এসেছে পরিমিত আলোচনায়। নাতিদীর্ঘ আলোচনা হওয়ায় পাঠক দারুণ উপকৃত হতে পারে এই বিষয়বস্তু থেকে ইংশা আল্লাহ। 


একজন গাইড তখনই উত্তম হবেন, যখন তিনি কেবল ভালোর পথ দেখিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে খারাপের সম্পর্কেও অবগত করেন। তেমনভাবেই লেখক বইয়ে কেবল কিভাবে ঈমান বাড়ানো যায় সেই কথা বলেই ইতি টানেননি। সাথে লিখেছেন ঈমান হ্রাসের কারণ ও প্রভাবকগুলো নিয়ে। কারণ যেসব কারণ ঈমান কমায়, সেগুলোর দ্বারে প্রহরী লাগিয়ে দিলে ঈমান বাড়বেই। 

 

এখানেও আছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাবকের ভিত্তিতে আলোচনা। কোনো আলোচনার অধীনে সেই কারণের শ্রেণিভেদ আসলে, সেই শ্রেণী নিয়েও আলোচনা এসেছে। 


এভাবেই একটা সুখপাঠ্য বই হয়ে উঠেছে "ঈমান পরিচর্যা" বই। একটা পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন প্রতিটা অন্তরের জন্য, যে অন্তর ঈমানের সুধাপানের জন্য তৃষ্ণার্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। তবে অবশ্যই মানবসৃষ্ট বইয়ের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে পূর্ণাঙ্গতা বলতে কিছু নেই।  


পাঠ্যানুভূতিঃ 


বইটার সবচেয়ে বড় স্পেশিয়ালিটি হলো এটা অনেকদিন ধরে আমার উইশলিস্টে ছিল।তারপর আলহামদুলিল্লাহ ২৪ এর একেবারে শেষে ওয়াফিলাইফের আয়োজিত পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতযোগিতায় বিজয়ীদের একজন হয়ে এই বই নিয়েছি পুরষ্কার হিসেবে। নিজের মরচেপড়া অন্তরের জন্য খুব দরকার ছিল বইটা।


বইটার কলেবর খুব বড়ও না, আবার একদম ছোটও না। আমার পারফেক্ট লেগেছে। আলোচনা গুলোর দৈর্ঘ্যও। আলোচনাগুলোয় নিয়ামক থেকে কিভাবে একজন উপকৃত হবে, তার প্র্যাকটিকাল উপায় বলে দেওয়ায় পড়ে খুব ফিল করতে পেরেছি বইটা আলহামদুলিল্লাহ।


বইটা সবকিছু মিলিয়ে দারুণ হলেও অনুবাদে অযথা কাঠিন্য আনায় মাঝে মাঝে সত্যি বলতে বিরক্ত লেগেছে। একটা কাব্যময়তা দেওয়ার জন্য বাক্যগুলোর শেষে ছন্দ আনতে গিয়ে অনেক সময়ই অনুবাদক কঠিন কঠিন বাংলা শব্দ নিয়ে হাজির হয়েছেণ, যা সার্বজনীয়তা হারায়। যেমন এই বই ইংলিশ মিডিয়াম বা ভার্সনের কোনো পাঠক পড়লে বেশিই ঝামেলায় পড়বে। এভাবে ছন্দ করে অনুবাদ অবশ্য পুরো বই জুড়ে ছিল না ভাগ্যিস। শুরুর দিকে কিছু জায়গায় ছিল। তবে বইয়ে কঠিন বাংলা শব্দ আনার কোনো দরকার ছিল বলে আমি মনে করি না। আশা করি, ওয়াফি পাবলিকেশন এই ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কারণ তাদের আরো দুটো অনুবাদ বই আমি পড়েছি। তবে সেগুলোয় এই ব্যাপার আসেনি।


ওয়াফি পাবলিকেশনের বইয়ের কভার সবসময় চোখ জুড়ানো হয়। এই বইয়ের কভারও তেমনই। খুবই স্নিগ্ধ সবুজ একটা কভার। মাশা আল্লাহ। তবে বইয়ের কয়েক জায়গায় বানানের ভুল চোখে পড়েছিল। 


তবে সব মিলিয়ে বইটা দারুণ। সব মুমিনের শেলফেই এই বইটা থাকা দরকার। যেন ঈমানের সমুদ্রে কখনো ভাটা পড়লে, এই বইয়ের পাতা উল্টে নিয়ামকগুলোয় চোখ বুলিয়ে ঈমান বৃদ্ধির মেহনতে লেগে যেতে পারে রাইট অ্যাট দ্যাট মোমেন্ট। 


Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...