Skip to main content

বই রিভিউ #২২: ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণী


বই রিভিউ #২২

বই: ডাক দিয়ে যাই তোমায় 
হে মুসলিম তরুণী 

লেখক: উসতাজ হাসসান শামসি পাশা


  • বইঃ ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণী
  • লেখকঃ উসতাজ হাসসান শামসি পাশা
  • প্রকাশনীঃ রুহামা পাবলিকেশন 
  • পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৭২

প্রাককথনঃ 

বর্তমানে উন্নতির নামে অসভ্যতা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সেই অধঃপতনের মূল টার্গেট হলো তরুণ সমাজ। জীবনের প্রতিটি আঙ্গিকে, ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে,সামাজিকভাবে একজন তরুণ বা তরুণীর কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আদেশ-নিষেধ থাকলেও, হাতে ধরিয়ে খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে বোঝানো হয়েছে এমন দিকনির্দেশনা সমাজে অপ্রতুল। তাই যুগের অবক্ষয়ে একজন মুসলিম তরুণীর জীবন গড়ার রূপরেখা কেমন হবে, সেটা জানাতেই মিশরের প্রখ্যাত লেখক, যিনি কিনা পেশাগত জীবনে একজন ডাক্তার, উসতাজ হাসসান শামসি পাশা তাঁর মেহনতে গড়ে দিয়েছেন "ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণী"। 

 

আলোচনায় এসেছেঃ


একজন তরুণী কোনো একক ভূমিকায় সমাজে থাকে না। সে একসাথে আল্লাহর বান্দা, মানবী, মেয়ে, বান্ধবী, স্ত্রী ইত্যাদি বহুমুখী ভূমিকায় অবতরণ করে। তাই প্রতিটা পরিচয়ের মোড়কে একজন মুসলিম তরুণীর আদর্শিকভাবে কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়, সেই কথায় সহজ-সাবলীল্ভাবে উঠে এসেছে "ডাক দিয়ে যাই তোমায় হে মুসলিম তরুণী" বইয়ে। 

বইয়ের সূচনায় আছে ব্যতিক্রমের ছোঁয়া। নারীর করণীয় নিয়ে প্রথমেই তাত্ত্বিক কথায় না যেয়ে লেখক ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনেছেন বরণীয় নারীসত্ত্বাদের উদাহরণ। এটা একজন নারী পাঠককে প্রথমেই অনুপ্রেরণা দিবে নিজেকে ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা, আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা, আছিয়া আলাইহিস সালাম, সারাহ আলাইহিস সালাম প্রমুখের মতো ঢেলে সাজাতে। তাই বইয়ের সূচনায় এমন দূরদর্শী কাজ প্রশংসার দাবী রাখে।

পরিচয়ের বিভিন্ন দিক থেকে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে একজন তরুণীকে। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের মতো বৃহৎ ব্যাপার থেকে শুরু হয়েছে পর্দা ও চরিত্রগঠন নিয়ে। কিন্তু অভিভূত করার বিষয় হলো লেখকের অতি সূক্ষ্ম বিষয় এড়িয়ে না যাওয়া। জীবনে বান্ধবী নির্বাচন,তার সাথে ইসলামের আদবের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ, উত্তম আদর্শের বোনদের প্রতি আগ্রহ-আচরণ থেকে বাবা-মায়ের সাথে ব্যবহার কেমন হবে, সহোদরের প্রতি ব্যবহার, সব কিছু নিয়েই লিখেছেন উসতাজ শামসি পাশা। এমন ছোট-ছোট বিষয়কেও যে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন, তা লেখকের ধীশক্তি ও বিচক্ষণতার প্রমাণ দেয়।এই আলোচনাগুলো বইকে করে তুলেছে অনন্যসাধারণ। 

নারীর যে কর্মক্ষেত্রও থাকতে পারে ইসলামী শরিয়তের বিধান মেনে,সেই ব্যাপারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ আলোচনা বইয়ের উৎকর্ষতাকে নিয়ে গিয়েছে শীর্ষে। প্রয়োজনের তাগিদে বাজারে গেলে কি করতে হবে, সে আলোচনাও বইয়ে আছে। 

সবশেষে পশ্চিমাদের চোখে ও ইসলামের চোখে নারীর অবস্থান ও অবস্থা তুলে ধরে স্পষ্টভাবে করা হয়েছে তুলনা।অতঃপর আখিরাতের সাফল্য পাওয়ার গাইডলাইন্সের সাথে সমাপ্তি টানা হয়েছে এই বহুল সমাদৃত বইয়ের। সমাদৃত বলেই তো বইটার অনুবাদ করা হয়েছে বাঙালী পাঠকসমাজের জন্য।   


পাঠ্যানুভূতিঃ 

বইটা পড়ে আসলেও আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। পথের কুমতলবী যুবকের ব্যাপারে নসীহত থেকে জীবনসঙ্গীর সাথে সমঝোতা কেমন হবে, একজন মুসলিম তরুণীর লেখাপড়া থেকে শুরু করে সে দায়ি হিসেবে কেমন হবে-একজন তরুণীর জীবনে ঘটে যেতে পারে এমন সম্ভাব্য সব দিক নিয়ে কথা বলা দেখে আমি অভিভূত। তাছাড়া কেবল আদেশ-নিষেধ করে একটা সীমা এঁকে দিয়েই লেখক উসতাজ হাসসান শামসি পাশা নিজের কাজ সারতে পারলেও, তিনি আসলেও বইয়ের নামের যথার্থতা বজায় রেখে সাবলীল ভাষায় দেখিয়ে দিয়েছেন লেখনীর মাধ্যমে যে "হে মুসলিম তরুণী, তোমার এই এই কাজ করে উত্তম হতে হবে। ঐ ঐ কাজ করলে তুমি হবে হীন।" 

বইয়ের প্রথমে হালকা মডারেট মডারেট ভাইব পাচ্ছিলাম লেখায়। কিন্তু "কর্মক্ষেত্রে নারী" শিরোনামের অধ্যায় না পড়েই কেউ যদি রেখে দেয়, তবে সিওর যে ভুল মেসেজ নিয়ে বই শেষ করবে। কারণ এই অধ্যায়ে ইসলাম যেমন কর্মক্ষেত্রের অনুমোদন দেয়, সেটার শরয়ি নীতিমালাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। প্রথমে তরুণীর সংসারের হক আদায় করে পারলে তারপর একটা "ফিমেল অনলি" ফিল্ড, যেখানে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে বিন্দুমাত্র ডিলিংস নেই, পর্দা লঙ্ঘনের সুযোগ নেই, এমন পরিবেশে থেকে নারীত্বের সাথে যায়, এমন কাজে রত থাকা। লেখক বারবার পরিবারের দায়িত্ব আঞ্জামের কথা লিখেছেন যেন আমরা নারীরা আমাদের মূল দায়িত্ব ভুলে গিয়ে অন্যপথে না হাঁটি।  এই অংশটা আমার দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ লেগেছে।  করপোরেট সিস্টেমের দাস না হতে বলে এমন কাজে চাহিদার সময় ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন লেখক যেন উম্মাহর সেবা নিশ্চিত করা যায়। কেবল "আমি অমুক ডাক্তার", "আমি অমুক জায়গার শিক্ষক" বলে বড়াই করার জন্য যেন সেই পেশা না হয়। 

অনুকরণীয় নারী চরিত্রদের গল্প শুনিয়ে শুরু করা, বাবা-মায়ের সাথে আমাদের কথার টোন থেকে নিয়ে বান্ধবীর সাথে আচরণ এমন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে আলোচনা, বর্তমান যুগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করণীয়-বর্জনীয় ভেঙে ভেঙে বলে দেওয়া, সব মিলিয়ে বইটা আমার চমৎকার লেগেছে।সবমিলিয়ে এই বইকে নারী বিষয়ক ইসলামিক নন ফিকশন জনরার ওয়ান অফ দ্য বেস্ট বুক বললে মোটেও বাড়াবাড়ি হবে না বলে আমার বিশ্বাস।  


Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...