বই রিভিউ #২১
বই: কুররাতু আইয়ুন
যে জীবন জুড়ায় নয়ন
লেখক: ডা. শামসুল আরেফীন
- বইঃ কুররাতু আইয়ুন (যে জীবন জুড়ায় নয়ন)-১
- লেখকঃ ডা. শামসুল আরেফীন
- প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল আসলাফ
- পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১১৮
- মুদ্রিত মূল্যঃ ১৯৫ টাকা
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
আমাদের সিলেবাস আর কারিকুলাম আমাদেরকে শেখায় ভালো কেরানী কিভাবে হতে হয়। কিভাবে ভালো জীবনসঙ্গী বা ভালো মা-বাবা হওয়া যায়-এগুলো শেখানো হয় না। তাই কেরানীগিরির বয়স পার হয়ে গেলে আপনি কোন আস্তাকুঁড়ে পচে মরবেন, তা নিয়ে এই পুঁজিবাদী সমাজ বিন্দুমাত্রও চিন্তিত নয়। সেই অস্পৃশ্য অংশের আলোচনা করতেই আমাদের প্রিয় শক্তি ভাই লিখেছেন"কুররাতু আইয়ুন"।
সুরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত আছে, "কুররাতু আইয়ুন"। অর্থ চোখের শীতলতা বা চোখের প্রশান্তি। শক্তি ভাই তার লেখায় এমন এক জীবনের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন যে জীবন হবে ইসলামের রঙে রাঙানো, প্রশান্তিদায়ক।
বইটা অনেকদিন ধরে আমার বুকশেলফে পড়ে আছে। কলেবরে ছোট হওয়ায় ৭ তারিখের রাতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় পড়ে শেষ করি ।
বইটাকে কেবল "সন্তান প্রতিপালন" ক্যাটাগরিতে রাখলে পূর্ণ ইহসান করা হয় না। কারণ বইয়ের শুরুতে শক্তি ভাইয়ের বাবার দ্বীনে ফেরার গল্পের হাত ধরে এসেছে নিজ বাসায় কিভাবে দ্বীনের দাওয়াহ দিতে হবে তার আলোচনা।
তারপর জীবনের ঘড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে টপিক এগিয়েছে। এসেছে বিয়ের জন্য পাত্রপাত্রী নির্বাচন ও দেখার কথা। তারপর বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা। এই জায়গাটা আমার আসলেও অনেক ভালো লেগেছে। লেখক ছেলেদেরকে সাফসাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে বিয়ের দিন দুইশ জনের পঙ্গপাল নিয়ে কনের বাড়ি থেকে খেয়ে আসা -কোনো ইসলামিক কাজ নয়। বিয়েতে কনের বাবার কোন খরচই নেই ইসলামের নিয়ম মানলে।
এরপরের আলোচনায় বোনদেরকে বিয়ের পরেই শ্বশুড়-শাশুড়ির থেকে আলাদা হয়ে না থাকার,ইহসানের জন্য শ্বশুড়-শাশুড়ির দেখভাল করে সওয়াব কামানোর ব্যাপারেও বুঝিয়েছেন দরদী ভাষায়। ভাইদেরকে বুঝিয়েছেন যে তোমার বাবা-মায়ের হক আদায় তোমার জন্য ফরজ। হবু শ্বশুড়-শাশুড়িকে দিয়েছেন উপদেশ। লেখার এই ভারসাম্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
ক্রমান্বয়ে এসেছে প্রেগনেন্সির সময় করণীয়। মজা লেগেছে, ভাই এখানে পুরোদস্তুর ডাক্তার হয়ে ডায়েট চার্ট দিয়েছেন, ওষুধের নামও বলে দিয়েছেন। হাহা!
এইবারে মূল আলোচনা। যদিও এই আলোচনা মূলত শুরু হয়েছে প্রেগনেন্সির সময়ের থেকেই। কারণ গর্ভে ৫মাসে বাচ্চা শ্রবণক্ষমতা লাভ করে। প্রসব পরবর্তী করণীয় , কোলের বাচ্চার দেখভাল, একটু বড় হলে তার বুঝ অনুসারে ঈমান-আকীদা গড়ে দেওয়া, লেখাপড়ার হাতেখড়ি, সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ শেখানো, স্কুলে দেওয়া, অনুকরণপ্রিয় সেই একতাল মাটির সামনে কিভাবে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করে আদর্শ ছাঁচে ফেলে তাকে একজন আদর্শ মুসলিম বানানো যায় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা দিয়ে সমাপ্তিতে পৌঁছেছে বইটা।
বইয়ের বাচনভঙ্গী যথেষ্ট ইনফরমাল। এটা বাজে লাগেনি। বরং এই ভাষায় সহজ করে দিয়েছে দ্রুত পড়া । আরেকটা ব্যাপার, এই বই ২০১৯ এর শুরুতে প্রকাশিত। জানামতে তখন শক্তি ভাইয়ের লেখক জীবনের শুরুর সময়। তাই নিজের অতীত জীবন,পরিবার ও তাবলিগের মেহনতে গিয়ে যা যা দেখেছেন, তার থেকেই উপদেশ দিয়েছেন। উনার বর্তমান লেখার গাম্ভীর্য এই বইয়ে খুব একটা নেই।
বইয়ের কভার চোখে একটা শান্তি দেয়। নামের মতোই। ভিতরে বানান ভুল চোখে পড়েনি।
তবেঃ
জাহেলিয়াত থেকে দ্বীনে ফেরা ভাইদেরকে অডিয়েন্স ধরে লেখক বলেছেন যে রূপে ভালো মেয়েকে দ্বীনের বিচার করে বউ করে আনতে। কারণ এককালে তারা নজরের হেফাজত করেনি। এখন যেন রূপের ব্যাপারে সবর করতে পারে। এই দিকটা একেবারে ভালো লাগেনি। কারণ বইয়ে মেয়েদের দ্বীনদারিতা নিয়ে যেহেতু কড়াকড়ি করা উচিত ও বইয়েও তাই বলা হয়েছে, ভাইদেরও দ্বীনের জন্য নিজেকে উদার বানানো উচিত। নাহলে যারা তথাকথিত রূপসী না, কিন্তু দ্বীনদার মুসলিমাহ, তাদের সাথে তো বেইনসাফী হবে।
সমাপ্তিতেঃ
আলোচনা-সমালোচনা মিলেই একটা বই হয়। "কুররাতু আইয়ুন" বইটাও তাই। খুঁত-উপকার-জ্ঞান সব বিবেচনায় একজন বাঙালি মুসলিমের বিয়ে-প্যারেন্টিং বিষয়ক প্রথম বই হোক "কুররাতু আইয়ুন-১"।
Comments
Post a Comment