Skip to main content

বুক রিভিউ #২০: পর্দা গাইডলাইন

 


বই রিভিউ #২০

বই: পর্দা গাইডলাইন 

পরিবেশ পরিস্থিতি পরামর্শ 

লেখক: তানজীল আরেফীন আদনান 


  • বইঃ পর্দা গাইডলাইন (পরিবেশ পরিস্থিতি পরামর্শ)
  • লেখকঃ তানজীল আরেফীন আদনান 
  • প্রকাশনীঃ উমেদ প্রকাশ
  • পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২১৬
  • মুদ্রিত মূল্যঃ ৩১৫ টাকা

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ 

"পর্দা গাইডলাইন"এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা পড়ে ও এক প্রিয় বোনের থেকে বই নিয়ে আরো জেনে "পর্দা গাইডলাইন" উইশলিস্টে রেখে দিয়েছিলাম । আলহামদুলিল্লাহ বইটা ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলা থেকে কেনা। গতকাল বিকেল থেকে রাত আড়াইটা অবধি পড়ে বইটা শেষ করেছি।     


বইয়ের সার্থকতাঃ 

 বেহায়াপনা আজ স্বাধীনতা ও উন্নতি, অসভ্যতাই সভ্যতা। এই উদ্ভট মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলামের পর্দার বিধান। পর্দার স্থূল বিষয় আমাদের মাথায় ঢুকলেও অনেক সূক্ষ্ম ব্যাপারে গাফলতি দিনশেষে নষ্ট করে দিচ্ছে আমাদের মেহনত। এর কারণ অজ্ঞতা ,আর নাহয় উদাসীনতা। তাই এই সময়ে "পর্দা গাইডলাইন" বইয়ের বিষয়বস্তু নির্ধারণ এক সময়োপযোগী ও বিচক্ষণ পদক্ষেপ। যুগের আবেদন ধরতে পারা এই বইয়ের একটা বিরাট সফলতা।  


পর্দা ফরজ হওয়ার রেফারেন্সের বিস্তারিত আলোচনা না করে বই শুরু হয়েছে ছেলে-মেয়ের পর্দা শুরুর বয়সের আলোচনা দিয়ে।   


এতোদিনর পড়া বইয়ের মধ্যে "মিশন ইসলাম" বাদে অন্য কোথাও দেখিনি, আলাদা করে গ্রামের মানুষদের নিয়ে আলোচনা। "পর্দা গাইডলাইন" বইয়ের শুরুই হয়েছে গ্রামে কোথায় কোথায় পর্দা নষ্ট হয় ও সেক্ষেত্রে করণীয় আলোচনার মাধ্যমে। গ্রামীণ সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করা বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে ইংশা আল্লাহ।  

 

গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে মেয়েদের উন্মুক্ত পুকুরে গোসল থেকে ঢাকার জ্যাম, বাসায় দেবর থেকে নিয়ে গৃহশিক্ষক বা গৃহকর্মী মেয়ে, বিয়ের অনুষ্ঠান, সব বিষয় সামনে এনে পর্দার ক্ষেত্রে  নিজেদের গাফলতির জায়গা ধরিয়ে দিয়েছেন লেখক।একজন মেয়ে হরদম যে সমস্যা ফেইস করে সেগুলোর ব্যাপারে এই বইয়ে আলোচনা এসেছে। তাই শিরোনামের "পরিবেশ পরিস্থিতি" অংশটা পূর্ণতা পেয়েছে। 


রেফারেন্সসহ আনা হয়েছে চেহারার পর্দার মতো দরকারী আলোচনা। তাছাড়া প্রতিটা ক্ষেত্রে পর্দার পরিস্থিতির সাথে দেওয়া পরামর্শগুলো বাস্তব ও ফলপ্রসু ইংশা আল্লাহ। এসেছে বির্ধমীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিধান নিয়ে কথা। 


বইটা মূলত একজন বোনের জন্য হলেও এই বই ভাইয়েরা পড়েও উপকৃত হবেন। কারণ পর্দা যে কেবল মেয়েদের জন্য আসা বিধান নয়, ছেলেদেরও যে পর্দার নিয়ম আছে,সেগুলো নিয়ে স্বল্প পরিসরে হলেও আলোচনা এসেছে। তাছাড়া এই বই একজন ভাই পড়লে তিনি তার অধীনস্থ নারীদের পর্দার ব্যাপারে কোথায় কোথায় বেশি খেয়াল রাখতে হবে, তা জানতে পারবেন।  

  

শেষে বাসায় সংগ্রাম করে পর্দা করা বোনদের জন্য হৃদয়গ্রাহী নসীহত, কুর'আন ও হাদিসের আলোকে প্রকৃত সফলতার কথা, বোনদের প্রতি লেখকের খোলা চিঠি- এই অংশগুলো বইকে করেছে ব্যতিক্রমধর্মী।   


বইয়ের ভাষা ঝরঝরে,সাবলীল এবং ফন্ট পারফেক্ট সাইজের হওয়ায় পড়তে অনেক কমফোর্টেবল লেগেছে। এক বা দুই জায়গায় বানান ভুল ছাড়া কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি। প্রচ্ছদটাও সিম্পলের মধ্যে সুন্দর। বাইন্ডিং ও পেইজ কোয়ালিটি টপ-নচ। সবমিলিয়ে একটা দারুণ বই। 


ভালো লাগা যেটা না বললেই নয়ঃ

বইটা যে নতুন জিনিস শিখিয়ে আমাকে আশ্চর্য করেছে সেটা হলো, ইসলাম মেয়েদেরকে পর্দা মেনে স্কুটি চালানোর পারমিশন দেয়। এইটুকু পড়ার পর থেকে স্কুটি কেনার কথা মাথায় ঘুরছে। হাহা!   

 আরো যা থাকতে পারতঃ  

যেহেতু বইটা অভারওল একটা হ্যান্ডবুক হিসেবে লেখক তার পাঠকসমাজকে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাই উচিত ছিল ভার্চুয়াল জগতে গাফলতি ও পর্দা রক্ষা আলোচনায় আনা। যেমন প্রোফাইল আনলকড রাখা, ফ্রেন্ডলিস্টে নন মাহরাম, চ্যাটিং, গ্রুপ ডিস্কাশন ইত্যাদি।    


বইয়ের একটা চমৎকার দিক হলো, র‍্যাগ ডে আর র‍্যাগিং নিয়ে আলোচনা, এখানে স্টাডি ট্যুরের আলোচনা আসাটা দরকার ছিল। 

  

শেষকথাঃ 


একটা বইয়ে কিছু অধরা থেকে যাবেই। এভাবেই তো এক বইয়ের ছেড়ে যাওয়া বিষয় নিয়ে আরেকটা বই আসবে। সাথে আবার রয়ে যাবে অপূর্ণতা। তাই ইতি টানব এই বলে যে "পর্দা গাইডলাইন" প্রতিটা মুসলিম ভাইবোনদের জন্য একটা মাস্ট রিড মাস্টারপিস। লেখককে আল্লাহ উত্তম জাযা দান করুন। আমিন। 


Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...