Skip to main content

বই রিভিউ #২৩: খুশু খুযু


বই রিভিউ #২৩

বই: খুশু-খুযু

লেখক: ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ 


  • বইঃ খুশু-খুযু
  • লেখকঃ ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ
  • প্রকাশনীঃ সমকালীন প্রকাশন
  • পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮৪
  • মুদ্রিত মূল্যঃ ১৪৫ টাকা


খুশু-খুযু শব্দগুচ্ছ অনেকের কাছেই অজানা হওয়ায় হয়তো কৌতুহল উদ্দীপক। তবে এই দুটো শব্দ বাংলায় বললে সেগুলো আসলে বড্ড চেনা ও গুরুত্ববহ হয়ে যায়। সালাতের খুশু-খুযু মানে সহজে ভাবার্থ করা যায় মনোযোগ ও একাগ্রতা। একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় না করলে, মূলত নামাজের মাধ্যমে প্রতিশ্রুত উপকার পাওয়া যায় না আর না সেটা মহান রব্বুল আলামীনের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়।

খুশু-খুযু দেহ ও মন দুইয়ের সমন্বয়ে হয়। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার, আজ আমরা নামাজে অমনোযোগী ও উদাসীন। নামাজ তো অনেকেই পড়া বাদ দিয়ে দেওয়ার জোগাড়। ওদিকে যারা পড়ছি,তাদের মাঝেই মোটাদাগে একদল কেবল যেন রবের দরবারে দরকারী হাজিরা কোনোমতে দিয়ে আসতে পারলে বাঁচি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সহায়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন শ্রেষ্ঠ মনীষীদের একজন। ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ।

বই সম্পর্কেঃ

বরেণ্য লেখক ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহর লেখা আসরারুস সলাহ বইয়ের অনুবাদ হলো "খুশু-খুযু"। বইয়ের মূল বিষয় হলো সালাত ও সালাতরত অবস্থায় প্রতিটি কাজ বা রুকনের মর্মার্থ অনুধাবনের জন্য আলোচনা।

শুরু হয়েছে মানুষের হৃদয়ের সাথে যমিনের তুলনা দিয়ে। তপ্ত, শুষ্ক যমিন বৃষ্টির জন্য করে হাহাকার। ভারি বর্ষণের পর সেই যমিনে প্রাণ ফেরে। তেমনই মানব হৃদয় হলো যমিন। রবের জিকির (স্মরণ) থেকে দূরে থাকায়, গাফেল থাকায় বা পাপে জড়ানোয় সেই যমিনের সঞ্জীবনী রস শুকিয়ে গিয়ে যমিন শুষ্ক হয়ে ওঠে। এই সময়ই সালাত, এক পশলা বৃষ্টির মতো জীবন ফিরিয়ে দেয় মানব হৃদয়ের যমিনে।

সালাত তাই চোখের শীতলতা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে সালাতের মধ্যে।

(আহমাদ ও নাসায়ী)

এমন আলোচনা দিয়ে সূচিত হয়ে ওযু থেকে ধরে ধরে সালাতের প্রতিটা ক্ষণ,এমনকি সুরা ফাতিহার প্রতিটি আয়াতের স্বতন্ত্র্য আলোচনা এসেছে ইবাদত হিসেবে। লেখক কেবল তাফসিরের আলোকে বা শাস্ত্রের আলোকে সেই আয়াত বা বৈঠকে বসে পড়া আত্তাহিয়াতুর অর্থ ও মূলভাব নিয়ে কথা বলেই কলম তুলে নেননি। একইসাথে সালাতের সেই সময়ে আমাদের মনের ও বাহ্যিক অবস্থা কেমন রাখা চায়, সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন।

বইয়ের শেষে আবার সব নির্দেশনা একসাথে করে পয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে সারমর্মের মতো। সবই সালাতে খুশু-খুযু বা মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য বাতলে দেওয়া পথের নিশানা। ছোট কলেবরের বই হয়েও দারুণ সমৃদ্ধ বই হলো সমকালীনের "খুশু-খুযু"।

পাঠ্যানুভূতিঃ

সালাত নিয়ে পড়া দ্বিতীয় বই এটা আমার জন্য। এই বইয়ের স্পেশালিটি হলো আমার এক প্রিয় আপু আমাকে এই বইটা আমাদের ক্যাম্পাসের এক ইসলামিক ইভেন্টে বসা সমকালীনের স্টল থেকে হাদিয়া দিয়েছিলেন। তাই এই বই আমার কাছে প্রিসিয়াস।

আবার আরেকটা বড় ব্যাপার হলো বইয়ের লেখক আমার ওয়ান অফ দ্য মোস্ট ফেভারিট রাইটার।

যাই হোক। বইটা যেন ধরার আগেই শেষ হয়ে গেল। চমৎকার বই মাশা আল্লাহ। সেই ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই লেখকের আরো বইয়ের মতো চিন্তা করার জন্য গভীরতা কম অনুভব করতে পারায় বইটা পড়েও মনে খচখচ করছে। কিন্তু এটা স্বীকার করবই যে, কেউ যদি তার নামাজ বা সালাতকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করতে চায় তো এই বই তার মাস্টরিড লিস্টে থাকাও মাস্ট।

সালাতের কোন সময়ে কি করণীয় খুশু-খুযু বাড়ানোর জন্য, সেই নির্দেশনা যেমন পেয়েছি পড়ে। তেমন সালাতের ভিতরের দু'আ, জিকিরের ব্যাপারে গভীরে গিয়ে আরো ইনসাইট, অর্থ জেনেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার বিশ্বাস, একজন মনোযোগী পাঠক বইটা পড়ার পর ইংশা আল্লাহ সালাতে নতুন মিষ্টতা পাবে। অবশ্যই যদি সে হয় sincere।

তবে যাই হোক। যাদের এই বই দিয়ে প্রথম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহর লেখা হবে, তারা প্লিজ কোনো কনক্লুশনে আসবেন না লেখকের লেখনী নিয়ে। কারণ এই বইয়ে সম্পূর্ণ ফুটে উঠে পারেনি তাঁর কলমের শক্তি, অগাধ জ্ঞানের ছাপ ও চিন্তার সুবিশাল গভীরতা। তাই ইট্টু আমার মন খারাপ।


Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...