বুক রিভিউ #১৯
বই: হিউম্যান বিয়িং
(শতাব্দীর বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব)
লেখক: ইফতেখার সিফাত
- বইঃ হিউম্যান বিয়িং (শতাব্দীর বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব)
- লেখকঃ ইফতেখার সিফাত
- প্রকাশনীঃ নাশাত পাবলিকেশন
- পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৬০
- মুদ্রিত মূল্যঃ ২২০ টাকা
- ক্যাটাগরিঃ ইসলাম ও সমকালীন বিশ্ব
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
ism নিয়ে পড়াশোনা বরাবরই আমাকে টানে। হেদায়েতের পর ২০২১ এর শুরুতে "হিউম্যান বিয়িং" বইয়ের সন্ধান পেয়ে আমার এক ছোটবোনের থেকে টেলিগ্রামে বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা করে ছবি নিয়ে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। কারণ? বাজারে আসার পরেই এই বই লিবারেলদের কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। মাঝে নিষিদ্ধ হয়ে যায় এই বইয়ের সেলিং। আলহামদুলিল্লাহ এই বছরের ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলা থেকে বইটা কিনি। শেষমেশ এই মাসের ৮ থেকে ১১ তারিখে পড়ে শেষ হয় "হিউম্যান বিয়িং"। এতো সিগনিফিক্যান্ট স্মৃতি আমার অন্য কোনো ইসলামিক নন ফিকশনের সাথে নেই।
মূল আলোচনায় আসি। পাশ্চাত্য সভ্যতা হলো নব্য ইরতিদাদ (দ্বীন ত্যাগ করে কুফরের দিকে ধাবমানতা)। নাস্তিক প্রকাশ্যে-স্বজ্ঞানে দ্বীন থেকে খারিজ হয়। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিকভাবে পাশ্চাত্যের গোলাম দ্বীনের আচার-অনুষ্ঠান পালন করলেও তার ভিতরে Perennialism (পাশ্চাত্যই সত্যের মানদণ্ড ও চিরন্তন সত্য, এই বিশ্বাস) তাকে অজান্তেই ইসলাম থেকে বাতিল করে দেয়। এই মহামারী আজ প্রতিটা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলা ভাষায় এই নব্য ইরতিদাদ বা পাশ্চাত্যের ফেতনার বিরুদ্ধে মৌলিক লেখনীর অভাব পূরণ করতে পথিকৃৎ হয়ে এসেছেন ইফতেখার সিফাত তার 'হিউম্যান বিয়িং" রচনার মাধ্যমে। যদিও বইটা একেবারে "মৌলিক" না বলে জানিয়েছেন লেখক।
বইয়ের বিষয় বিন্যাস অত্যন্ত গোছানো। ভূমিকার পরে শুরু হয়েছে "পরিভাষার চোরাবালি" অধ্যায়। যেকোনো পরিভাষা অন্য সভ্যতায় ঢুকে গেলে দিনশেষে সে নিজের মূল অর্থেই ফিরে যাবে। এভাবে হয় বুদ্ধিবৃত্তিক বিজয়। পশ্চিমাদের দাঁড় করানো মুখরোচক ism দিয়ে ইসলামকে সাজানো (মর্ডানিজম) বা সেই পরিভাষা ও তত্ত্বগুলোকে ইসলামিকরণ করা (রিভিশনিজম) প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ক্ষতি, সে
বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে।
সভ্যতাকে বুঝতে তার বিকাশের ধাপ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ ও পাশ্চাত্যকে বুঝতে এর ভিত্তিপ্রস্তর গড়া তিনটি দর্শন সম্পর্কে পাশ্চাত্যের লেন্সে পড়াশোনা জরুরী। গ্রিস সভ্যতা থেকে কিভাবে এই বিংশ শতাব্দীতে এসেছে পাশ্চাত্য সভ্যতা, সে আলোচনার পর লেখক দক্ষতার সাথে "স্বাধীনতা, সমতা, উন্নতি"র ব্যবচ্ছেদ করেছেন। আলোচনা হয়েছে তিনধাপেঃ
উক্ত তত্ত্বের প্রকৃত অর্থ,
ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিকতা ও
সেগুলো ইসলামিকরণের উদ্ভট চেষ্টা নিয়ে।
আরো অন্যান্য ism কিভাবে "স্বাধীনতা, সমতা ও উন্নতি" দিয়েই গড়া, তা তুলে ধরেছেন লেখক।
এসেছে হিউম্যান রাইটস, হিউম্যানিজম মিলিয়ে হিউম্যান বিয়িং হয়ে ওঠার কথা। হিউম্যান বিয়িং মানে স্রেফ মানুষ নয়। এ এমন এক সত্ত্বা যে নিজেই নিজের ইলাহ। সে নিজের ভালো-মন্দ নির্ধারণ করবে যুক্তি দিয়ে। ইসলামের ওহি দিয়ে না। তার মূলনীতি হলো হিউম্যান রাইটস- স্বাধীনতা, সমতা ও উন্নতি। হিউম্যান রাইটসের সাথে হিউম্যানিজম মিলে হয় একজন হিউম্যান বিয়িং। নাহলে, যেই সত্ত্বা তৈরি হয়, সে অ-মানুষ।
নিজে যেমন আকল খাটিয়ে খায়েশাত পূরণ করবে, তেমন অন্য যে কেউ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিজের মর্জি মতো নেবে। সমতায় বিশ্বাসী হিউম্যান বিয়িং সেই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করবে। উন্নতি হবে পূঁজি বাড়িয়ে।সেই পূঁজি দিয়ে মিটবে চাহিদা। পাশ্চাত্য সভ্যতায় মন্দ বলতে পারতপক্ষে কিছুই নেই।
প্রশ্ন থেকে যায়, এই হিউম্যান বিয়িংকে পরিচর্যা করা লিবারেল সমাজ কি সত্যিই উদার? মোটেও না। সেক্যুলারিজম ইটসেলফ একটা ধর্ম। সে তার অবাধ্যতাকে বরদাস্ত করে না। রলসের বাতলানো পথে সে দমন করে সব outlaw দেরকে। দেখানো হয়েছে কিভাবে General Will দিয়ে Will of All কে দমিয়ে রেখে স্থায়ী করা হয় সেক্যুলারিজমের রাজত্ব।
পুরো বইটা এককথায় আউটস্ট্যান্ডিং। আমি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি ৯৮,৯৯ ও ১০০ নং পৃষ্ঠার "আমরা আগে মানুষ নাকি মুসলিম?" এই প্রশ্নের উত্তর পড়ে। লেখকের জ্ঞানে ও লেখনীতে আল্লাহ অনেক বারকাহ দান করুন। দ্বীনের পথে ফেরার পর মনস্তাত্ত্বিকভাবে পাশ্চাত্যের গোলামীর শেকল ভাঙতে এই বই সবার আগে পড়া ম্যান্ডেটরি।
Comments
Post a Comment