বই রিভিউ #১৮
বই: সূরা কাহফের আলোকে
মুক্তির মশাল
লেখক: ড. খালিদ আবু শাদী
#book_review
- বইঃ সূরা কাহফের আলোকে মুক্তির মশাল
- লেখকঃ ড খালিদ আবু শাদী
- প্রকাশনীঃ সন্দীপন প্রকাশন
- পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৩৫
প্রাককথনঃ
“যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে এটি তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী (সময়) নূরে আলোকিত করে দিবে।”
[মুসতাদরাকে হাকেম (২/৩৯৯) ও বাইহাকী (৩/২৪৯)]
জুম্মার দিনে বা শুক্রবারে একজন মুসলিমের কর্তব্য থাকে মাগরিবের আগেই সুরা কাহফ পড়ে নেওয়া। এটা হবে তার জন্য নুর পরের শুক্রবার অবধি। তাকে দেওয়া হবে আখিরাতে মর্যাদা। আবার সুরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত থাকলে বলা হয়েছে যে সে মিথ্যা মাসীহ দাজ্জালের পরীক্ষা বা ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে।
সহীহ : মুসলিম ৮০৯, আবূ দাঊদ ৪৩২৩, তিরমিযী ২৮৮৬
এই হাদিসগুলোর ব্যাপারে অবগত হওয়ার পর কখনো কি জানতে ইচ্ছে হয়নি যে কি এমন আছে এই এক সুরায় যে প্রতি সপ্তাহান্তে পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? কি এমন গূঢ়রহস্য আছে?
বই সম্পর্কেঃ
বিখ্যাত মিশরীয় লেখক ড খালিদ আবু শাদীর লেখা "আনওয়ারুন নাজাতি ফি সূরাতিল কাহফি" বইয়ের অনুবাদ করে সন্দীপন প্রকাশন বাঙালি পাঠকসমাজকে উপহার দিয়েছে "সূরা কাহফের আলোকে মুক্তির মশাল"।
সুরা কাহফ এক বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ সুরা। যা সপ্তাহান্তে তিলওয়াত করা ও প্রথম দশ আয়াত মুখস্তের উপর বিভিন্ন কারণে জোর দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তাই বোঝায় যায়, এই সুরা যেন কোনো গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছে। যা মিলে গেলেই কেল্লাফতে!
যুগ যুগ ধরে মানুষ জীবনে চার ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। দুনিয়ায় জান্নাতের পাথেয় সংগ্রহের পথে এই চার প্রতিবন্ধক হলোঃ
- দ্বীনের ফিতনা বা পরীক্ষাঃ এই পরীক্ষায় পড়েছিল সেই গুহার যুবকেরা বা আসহাবে কাহফের যুবকদল।
- সম্পদের ফিতনাঃ দুইজন বাগান মালিকের সম্পদ নিয়ে কথোপকথনে যা উঠে এসেছে।
- ইলম বা জ্ঞানের ফিতনাঃ যখন মুসা আলাইহিস সালাম ভেবেছিলেন তিনিই তাঁর যুগের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আদেশ দেন খিযির আলাইহিস সালামের কাছে যেতে। এক সমুদ্র অভিযানের পর মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর সঙ্গী ইউশা ইবন নুন আলাইহিস সালামকে নিয়ে সেখানে পৌঁছান। খিযির আলাইহিস সালামের সাথে চলতে চলতে মুসা আলাইহিস সালামের চলে জ্ঞানের পরীক্ষা।
- ক্ষমতার ফিতনাঃ ইতিহাস বলে, সমগ্র পৃথিবীকে শাসন করেছে চারজন বাদশাহ। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন জুলকারনাইন। পৃথিবী ভ্রমণে তাঁর অভিজ্ঞতা ও ইয়াজুজ-মা'জুজ এর অত্যাচার থেকে এক সম্প্রদায়কে বাঁচানোর ইতিহাস এসেছে সুরার শেষাংশে।
কুর'আন ইতিহাসের বই নয়।"সুরা কাহফের আলোকে মুক্তির মশাল" বইয়ে জ্ঞানে বিদগ্ধ লেখক এই সুরার আয়াতের ভিতরের মুক্তোরাশি উঠিয়ে এনে তুলে ধরেছেন পাঠকসমাজের সামনে।
প্রতিটি ফিতনার অংশের আলোচনা হয়েছে তিনভাগে। প্রথম ভাগে কুর'আন থেকে হুবুহু ঐ অংশের উল্লেখ এসেছে। এসেছে তার অর্থ। তারপর প্রাসঙ্গিক আলোচনা। চারটি ফিতনার ইতিহাসের আলোচনা এসেছে তাফসির, ইতিহাস ও আরবি ভাষাশাস্ত্রের ভিত্তিতে। এভাবেই বইটা হয়ে উঠেছে এক গাইড বুক এই জামানার মানুষের জন্য, যেন তারা দ্বীনের পথে আসা বড় চার প্রতিবন্ধককে কিভাবে মোকাবেলা করে জয়ী হতে হয়, সেই দিকনির্দেশনা পায়। অবশ্যই কুর'আনেই তা বলা আছে। সেটাকেই আরো খণ্ডায়ণ করেছে লেখক এই বইয়ে।
শুধু তাই নয়। বইকে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য দিয়েছে আলোচনার শেষে আলাদাভাবে আসা উক্ত ফিতনায় করণীয়-বর্জনীয় অংশ। এভাবে বইটা হয়ে উঠেছে এক প্রাঞ্জল ও অনবদ্য রচনা।
পাঠ্যানুভূতিঃ
আমাদের এই সময় থেকে কেবল নয়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় থেকে সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমেরা দাজ্জালের ভয় পেতেন। আর আমাদের এই পচন ধরা সমাজে বসবাসের সময় তো প্রায় প্রতিটি সচেতন মুসলিমের মাথায় ঘোরে, "এটায় কি তাহলে শেষ জামানা?"
এই ভয়টা থাকা উচিত। কারণ Precaution is better than cure। সুরা কাহফে সব সমাধান আছে জানার পর থেকে ইচ্ছা ছিল বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে এই সুরার এমন কোনো বই পড়ার। আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াফিলাইফের সাইট খুঁজে এই রত্ন পেয়ে যাই।
বইটা এতোটা প্রাসঙ্গিক লেগেছে যে বলে বোঝাতে পারব না আমি। মাশা আল্লাহ। আসহাবে কাহফের যুবকেরা যেন আমার কতো চেনা।কারণ বর্তমানেও সমাজ এমন ভাবে অশ্লীলতা ও পচনের দিকে যাচ্ছে যে দ্বীন নিয়ে বাঁচতে চাওয়া মানুষ পেরেশান। এই সময়ে সমাধান এসেছে সেই গুহার যুবকদের জীবন থেকে। কুর'আনে বর্ণিত ঘটনার বিশদ আলোচনা পড়ে যেকোনো সচেতন মুসলিম এই ফিতনার দিনে নির্জনবাসের ধারণা পাবে। সাথে পাবে এই ফিতনা থেকে রেহাই পাওয়ার পথের সন্ধান ইংশা আল্লাহ। তাই সব্বাইকে বলব, এই বইটা পড়ুন।
সম্পদ এক পরীক্ষা, এটা আর আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। সেই পরীক্ষায় পতিত দুই ব্যক্তির ঘটনা,তারপরে ইলমের পরীক্ষায় পড়ে মুসা আলাইহিস সালামের অভিযানে বেরিয়ে পড়া, যুলকারনাইনের নিষ্ঠাবান শাসন-সবকিছুই শিক্ষণীয়। কিন্তু গাইড বই যেমন অনেক প্রশ্নের উত্তর লিখে রাখে, তেমন আমাদের যাদের আরবি ভাষাশাস্ত্র, তাফসিরে তেমন একটা দখল নেই, তাদের জন্য কুর'আনের সুরা কাহফ বোঝার সহায়িকা হলো এই বই। এমনিও কুর'আন নিয়ে চিন্তার উপায়ই হলো শানে নুযুল (আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার ইতিহাস), তাফসির (ব্যাখ্যা) পড়ে ভাবনায় ডুবে যাওয়া।
সব মলিয়ে বইটা একটা "মাস্টরিড"। এই বই নিয়ে লিখতে থাকলে আর শেষ হবে না। তাই এখানেই থামছি।
Comments
Post a Comment