Skip to main content

বই রিভিউ #১৭: জাহান্নাম: দুঃখের কারাগার

 


বই রিভিউ #১৭

বই: জাহান্নাম: দুঃখের কারাগার

লেখক: ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রাহিমাহুল্লাহ

 #book_review


বই: জাহান্নাম: দুঃখের কারাগার

লেখক: ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রাহিমাহুল্লাহ 

অনুবাদ: আম্মার মাহমুদ

প্রকাশনী: পথিক প্রকাশন


মানুষের দুনিয়ার কাজের পূর্ণ প্রতিদান দিতে আল্লাহ আযযা ওয়াজাল সৃষ্টি করেছেন জান্নাত ও জাহান্নাম। কেবল এই কারণেই না। এই দুই সৃষ্টির পিছের আরো হিকমাহ (প্রজ্ঞা) আছে। যার একটি হলো, মানুষকে জান্নাতের পুরষ্কারের আশায় উজ্জীবিত করে ভালো কাজে ব্রত রাখা। অন্যদিকে জাহান্নামের ভয় যেন তাদেরকে তাদের আসল কাজের কথা ভুলে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। কি মানুষের আসল কাজ? 


❝আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।❞  (সুরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৫৬)


জান্নাতের মনোরম পরিবেশের বর্ণনা আমাদেরকে মুগ্ধ করে। কিন্তু কেবল মুগ্ধতা একজন দাসকে তার কাজ ঠিকমতো আঞ্জাম দেওয়ার অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। তাই আল আলিম, সবর্জ্ঞ প্রভু, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জাহান্নামের ব্যাপারে বলেছেন কুরআনে, বলিয়ে নিয়েছেন তাঁর প্রেরিত নবি-রাসুলদের মাধ্যমে। আমরা তাই পাই জাহান্নামের ব্যাপারে বলা বিভিন্ন হাদিস রাসূলুল্লাহ ﷺ এর থেকে। 


বই সম্পর্কে: 


জাহান্নাম। এক দুঃখের কারাগার। শাস্তি দেওয়ার জন্য এমন কোনো গা শিউরে ওঠানো ব্যবস্থা এখানে নেই-এমন নেই। কেনই বা থাকবে না? এই জায়গা তো নিকৃষ্টদের জন্য। যারা ছিল দুনিয়ায় অহংকারী, অত্যাচারী। যারা অহংকারের বশবর্তী হয়ে আল্লাহর অবাধ্যতায় মেতে থাকত। কুরআনে এসেছে: 


❝আর তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। আর এর পরেও রয়েছে কঠিন আযাব ।❞ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত ১৭)


বক্ষ্যমান বইয়ে উঠে এসেছে, সেই অনন্ত দুঃখের জায়গার খুঁটিনাটি বর্ণনা। এসেছে জাহান্নামের বিভিন্ন উপত্যকার কথা, পাহাড়ের কথা, এর গভীরতা, আগুনের উত্তাপ, এর সাপ-বিচ্ছুর বর্ণনা। সবই এসেছে কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি থেকে, তার তাফসির থেকে। আলোচনা হয়েছে রাসূল ﷺ এর হাদিসের সূত্র ধরে, সেই সূত্র থেকে অন্যান্য সালাফদের মহামূল্যবান উপলব্ধি ও গবেষণার কথাও এসেছে বইয়ের পাতায় পাতায়।


বইটা পড়লে পাঠক এই মোহের জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পাবে যথেষ্ট রসদ। ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রাহিমাহুল্লাহর অন্যান্য বইয়ের মতো এই বইও এক অনবদ্য রচনা। যা জাগিয়ে তুলতে পারে যেকোনো মৃত অন্তরকে ইংশা আল্লাহ।


পাঠ্যানুভূতি:


আবার ভাঙা ক্যাসেটের মতো বলবো, আমি ক্লাসিকাল ইসলামিক writer দের বই পড়ার জন্য আলাদা একধরনের আগ্রহ কাজ করে। এই ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলা থেকেও কিনেছি এইসব মহামান্য মনীষীদের লেখা বই। আর আমার ইসলামিক নন ফিকশন বইয়ে হাতেখড়ির শুরু দিকেই আমার পরিচয় হয়েছিল ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রাহিমাহুল্লাহর লেখার সাথে "সালাফদের চোখে দুনিয়া" বইয়ের হাত ধরে। সেই থেকে আমি তাঁর লেখার অনুরক্ত, ভক্ত।


Classical writer দের বইয়ের ধাঁচেই এই বইয়ে জাহান্নামের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা এসেছে জাহান্নামের বিভিন্ন জিনিস,  সেখানে থাকা বিভিন্ন সৃষ্টি নিয়ে। বাদ যায়নি যাক্কুম বৃক্ষ থেকে শুরু করে জাহান্নামের বেড়ীর বর্ণনা। মাশা আল্লাহ! খুব সুন্দর করে সাজানো একটা বই।


এই বই আমি পড়েছি বইটই app থেকে। তাই বইয়ের ছবি নিজের হাতে তোলার উপায় নেই। লাগিয়ে দিলাম website থেকে নামানো একটা ছবি। বইটই app এ কিনেছিলাম এই বই আমার গত year (1-1) এর Semester Final এর সময়। কারণ exam এর সময় পড়ার ফাঁকে ফাঁকে যেই ছোট্ট break নিই, সেই সময় বই পড়ার একটা অভ্যাস আমার আছে আর এই অভ্যাসটাকে আমি খুবই ভালোবাসি আর admire করি। তাই উপকারী জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে আর এই মিছে দুনিয়ার মোহ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনতে এই বইটায় আমি choose করেছিলাম। 


তবে আমার দ্বারা non academic বইয়ের pdf or online version পড়া হয়ই না। তাই শেষ করতে করতে এই year (2-1) এর mid semester exam চলাকালে শেষ হলো আলহামদুলিল্লাহ বইটা। প্রতি সময় এই বই নিয়ে বসলেই আমার ভিতরে শিহরণ বয়ে যেত। 


নিজের গুনাহের ব্যাপারে ভয় ধরানোর জন্য এক দারুণ প্রতিষেধক হতে পারে এই বই। যেকোনো মুমিনের উচিত এই বইটা পড়া! Must read! এই ভয়ই যেন হয় আমাদের রবের দিকে দৌঁড়ে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা। 


বইটা পড়ে মনের মধ্যে অবশ্যই জাহান্নামের কিছু ভয়ঙ্কর ব্যাপার গেঁথে যাবে। আমার যেমন একটা জায়গায় মাথা গেঁথে গিয়েছে। তাহলো ❝জাহান্নামের আগুন পৃথিবীর আগুনের তুলনায় সত্তর গুণ গরম। কোনো জাহান্নামীকে যদি দুনিয়ার আগুনে কিছুক্ষণ ছাড়া হয়, তাহলে সে এই কম উত্তাপের জন্য নিদ্রা যাবে।❞ এদিকে দুনিয়ার আগুনের হালকা আঁচই আমাদের সহন সীমার বাইরে।


তাই যেকোনো আল্লাহর বান্দাকে, যে দুনিয়ার মোহে পড়ে অন্তর কঠিন করে ফেলছে,গুনাহ থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজলেও নিজের ভিতর থেকে যথেষ্ট জোর পাচ্ছে না, তাদেরকে বলব, অবশ্যই এই বইটা পড়বেন। কারণ মৃত্যু, জাহান্নাম, এগুলো হলো কঠিন অন্তরের প্রতিষেধক।  আর অবশ্যই এই বইটা যেই আলোচনা পাঠের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে ইংশা আল্লাহ।


book review by Homaira Anjum

Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...