Skip to main content

বই রিভিউ #১৫: আত্মার ওষুধ

 


বই রিভিউ #১৫

বই: আত্মার ওষুধ

লেখক: ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ 

  • বইঃ আত্মার ওষুধ
  • লেখকঃ ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ
  • অনুবাদকঃ মহিউদ্দিন রূপম
  • প্রকাশনীঃ সন্দীপন প্রকাশন লিমিটেড
  • পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২২৪

প্রাককথন

আজ অবধি প্রতিটি কালজয়ী সৃষ্টির পিছে রয়ে গিয়েছে কোনো এক গল্প বা ঘটনা। যেই ঘটনার ভাবনা প্রতিফলিত হয়ে উঠে এসেছে এক অনিন্দ্য সুন্দর সৃষ্টি হয়ে। তেমনি এক সুগভীর চিন্তাপ্রসূত প্রশ্নের মুখে যুগশ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ আল্লাহর মেহেরবানীতে রচনা করেন "মুখতাসার আল জাওয়াবুল কাফী, আদ-দাউ ওয়াদ-দাওয়া"। সেই গ্রন্থেরই অনুবাদ হলো "আত্মার ওষুধ"। কি ছিল সেই প্রশ্ন? সেটা ছিলঃ

জনৈক ব্যক্তি বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে এবং সে জানে এই অবস্থা চলতে থাকলে তার দুনিয়া-আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। তার ব্যাপারে অধিকাংশ আলিম ও ইমামগণ কি পরামর্শ দেন? উল্লেখ্য, সে এসব পরীক্ষা কাটিয়ে উঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু পরীক্ষা ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। এ থেকে বাঁচার উপায় কী? কীভাবে সে এসব পরীক্ষা থেকে মুক্তি পাবে?

(প্রশ্নকারী আরো বলল) আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির প্রতি রহম করুন, যে পরীক্ষায় জর্জরিত ব্যক্তির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। 

বই সম্পর্কে 

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রোগের সাথে ওষুধও পাঠিয়েছেন।

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬৭৮

শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মানুষ সদা সচেতন। কিন্তু তার থেকে ভয়ানক যে অন্তরের ব্যাধি, সে সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা একেবারে নেই বললেই চলে। আর এই অন্তরের ব্যাধীর কারণ হলো কৃত পাপ। 

"অন্তরের ওষুধ" বইয়ে কালজয়ী ইসলামিক ক্লাসিক লেখক ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ সবিস্তারে লিখেছেন পাপের কুফল সম্পর্কে। অত্যন্ত পাণ্ডিত্যের সাথে তুলে ধরেছেন পাপের দুনিয়ার ও আখিরাতের পরিণতির ব্যপারে। কুর'আন ও হাদিসের রেফারেন্সের সাথে নিজ ইলমের মাধ্যমে বইটাকে করে তুলেছেন এক "অবশ্যপাঠ্য" বই প্রতিটি মানুষের জন্য।

কেবল পাপের প্রাপ্তী নিয়েই নয়, শেষে বড় বড় পাপ যেমন শিরক, যিনা, স ম কা মি তা ইত্যাদি বড় পাপ নিয়েও আলোচনা এসেছে বইয়ে। এভাবেই ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ সুনিপুণভাবে তাঁর কাছে পেশ করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। 

পাঠ্যানুভুতি

প্রথমেই বলব যে আমার সবচেয়ে প্রিয়, খুব খুব প্রিয় লেখকরা মূলত ইসলামিক ক্লাসিক লেখকবৃন্দ। তাঁদের মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ। তাঁর এমন কোনো লেখা নেই যেটা আল্লাহর ইচ্ছায় কালজয়ী হয়ে থেকে যায়নি। 

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহর লেখা প্রতিটি বই স্বতন্ত্র্য ভাবে ভালো লাগার মতো। কারণ তিনি যেন ইলমের আঁধার। সুব'হা-নাল্লা-হ! তাঁর লেখা বই পড়ে অভিভূত হই আর আফসোস করি- ইশ! যদি আমি আরবি ভাষা আয়ত্ত করতে পারতাম যে পড়ে সেগুলোর অর্থ বুঝে যাওয়া যায়, তবে আমি কেবল ইনার বই নিয়েই পড়ে থাকতাম। কিন্তু সেটা পারছি না বলেই অনুবাদকদের হাত ধরে আসা অনুবাদ আমাকে পড়া লাগে। তবে এক্ষেত্রে মহিউদ্দিন রূপম প্রশংসার দাবিদার। খুব প্রাঞ্জলভাবে ও সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করেছে। তাই শান্তিতে পড়া যায় বইটা।

যেকোনো ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পড়লে সেটা মনে বেশি দাগ কাটে। আমাদেরকে ভাবাই বেশি। তেমনই পাপের ক্ষতি নিয়ে পড়ার সময় আমারও একই মনোভাব তৈরি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। এই বই পড়ার প্রতিদিন ছিল আমার আত্মোপলব্ধির সময়। পড়তাম আর আপসেই চিন্তা চলে আসত নিজের হালত নিয়ে। নিজের অন্তরের অবস্থা, পাপ ইত্যাদি নিয়ে ভাবাত এই বই আমাকে। 

বইটা শেষ করার অদম্য ইচ্ছা ছিল আজকের মাঝে কারণ আমার কালকে থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আবার সেই ইউনিভার্সিটির চাঞ্চল্যতায় ভেসে যেতে হবে। ঠিক করে রেখেছিলাম যে এই বই দিয়ে শেষ করব আমার সেমিস্টার ব্রেক। আলহামদুলিল্লাহ পেরেছি শেষ অবধি। কিন্তু বই শেষ করে আবার মনে হচ্ছে পরের বছর কবে সেমিস্টার ব্রেক আসবে। আবার আমি এই বই রিভিশন দিব। বার বার পড়লেও তৃষ্ণা মিটবে না এই বইয়ের পাতায় ডুবে থাকার। মাশা আল্লাহ এতই সুন্দর বই! আল্লাহ এই বইয়ের লেখক ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহকে এই মেহনতের অতি উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।


Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...