Skip to main content

বই রিভিউ #০৪: যে জীবন মরীচিকা

 বই রিভিউ #০৪

বই: যে জীবন মরীচিকা

লেখক: শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম


বই: যে জীবন মরীচিকা

লেখক: শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম

ভাষান্তর: আরিফ আবদাল চৌধুরী

পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১২৬

সমকালীন প্রকাশন


"তোমাদের আগে যারা ছিল তারা এই জীবনের জন্য সেইটুকু বাকি রাখতেন- যা আখিরাতের প্রয়োজন মেটানোর পর অবশিষ্ট থাকত। অন্যদিকে তোমরা আখিরাতের জন্য তা-ই বাকি রাখো- যা তোমাদের দুনিয়ার জীবনের সকল প্রয়োজন মেটানোর পরে অবশিষ্ট থাকে।”

একজন সালাফের জবান থেকে উৎসরিত এক নির্মম সত্য। দুনিয়া তার সকল ভোগ সামগ্রী নিয়ে আমাদের সামনে হাজির আজ। সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমেরা, তাবে-তাবেয়িন, সালাফেরা যেই দুনিয়া থেকে পালিয়ে বেড়াতেন, সেই দুনিয়াকে পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছি আমরা সবাই।

এখানে অবশ্য একটা কথা থেকেই যায়। “মধ্যমপন্থা”। যখন দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচার তাগাদা দেয়া হচ্ছে, তখন কেউ আবার অতিমাত্রায় দুনিয়াকে ঘৃণা করতে শুরু করে। মাঝে মাঝে সেই ঘৃণার মাত্রা এতো বেড়ে যায় যে সেই ব্যক্তি দুনিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেয়। এটাও বাড়াবাড়ি। কারণ দুনিয়ায় আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহের স্থান। একে ঘৃণা করে এর থেকে আমাদের দরকারী বেচাকেনা যদি সেরে না নিই, তাহলে আখেরে আমাদেরকেই পস্তাতে হবে। এই দুনিয়াকে ঘৃণা করা নিয়ে বাড়াবাড়ি আর দুনিয়ায় মজে যাওয়ার ছাড়াছাড়ির মাঝের পথই হলো উত্তম পথ। সেই উত্তম পথের আলোচনা, দুনিয়ার ধোঁকা, মুমিনের করণীয় নিয়েই শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিমের লেখা বই “আদ-দুনইয়া যিন্নুল যায়িল” এর বাংলা অনুবাদ “যে জীবন মরীচিকা”।

বিষয়বস্তু

সমকালীন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত “যে জীবন মরীচিকা” প্রকৃতপক্ষে শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিমের “আদ-দুনইয়া যিন্নুল যায়িল” বইয়ের বাংলা অনুবাদ। বইয়ের মূল বিষয় হলো “যুহদ” তথা দুনিয়াবিমুখতা। 

আল্লাহ তা'য়ালা কুর'আনে বার বার বলেছেন যে এই দুনিয়ার শোভা-সৌন্দর্য সবই ধোঁকা, এর সম্পদ-শক্তি-প্রাচুর্য সবই পরীক্ষাস্বরূপ। পাশাপাশি আমাদের রব আখিরাতের স্থায়িত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথাও বলেছেন। আমাদের রব, যিনি সৃষ্টি করেছেন দুনিয়া, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, তাঁর থেকে তাঁর সৃষ্ট দুনিয়ার স্বরূপ আর কেই বা সঠিকভাবে জানাতে পারবে আমাদেরকে? তাই যুগ শ্রেষ্ঠ মনীষী অর্থাৎ নবি-রাসুল আলাইহিস সালাম, সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, তাবে-তাবেয়িন, সালাফরা দুনিয়া থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে চলতেন। যতটুকু সম্পদ আহরণ করা তাঁদের উপর তাঁদের পরিবারের হক ছিল, ঠিক ততটুকুই তাঁরা আহরণ করতেন। তাঁদের সেই জীবনবোধ ও উপলব্ধির কথায় উঠে এসেছে “যে জীবন মরীচিকা” বইয়ে। তাঁদের জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বাণী দিয়েই অলংকৃত হয়েছে বইটি। 

কোনো সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বা সালাফের বাণীর পরেই “হে মুসলিম” সম্বোধন করে লেখক পাঠকের জন্য বার্তা লিখে রেখেছেন বইয়ের প্রতি পাতায়। বইটির বিশেষত্ব হলো, ঘৃণায় দুনিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে না নিয়ে কিভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আখিরাতের প্রয়োজনীয় পাথেয় সংগ্রহ করা যায়, সেই কথা লেখক বলেছেন। সাথে বার বার এই জীবনের তুচ্ছতা, দুনিয়ার শক্তি-সম্পদের লোভে পড়ার পরিণতি ও আখিরাতের জন্য কাজ না করার ফল ইত্যাদি ব্যাপারে হুশিয়ারী দিয়েছেন। এভাবেই দুনিয়ার জীবনের স্বরূপ উন্মোচন করে ও আখিরাতের কাজের প্রতি মনোযোগ দেয়ার তাগিদ দিয়েই ইতি টানা হয়েছে বইয়ের।

পাঠ্যনুভূতি

যান্ত্রিক জীবনের যাতাকলে পড়ে যখনই বুঝি দুনিয়ার নেশায় পেয়েছে আমাকে, তখনই আমি “যুহদ” বিষয়ক বই নিয়ে বসি। এবারেও সেই একই কারণে ২৩ সালের শেষ কেনাকাটায় “যুহদ” বিষয়ক বই রেখেছিলাম।

ইসলামের বরেণ্য মনীষীদের কথা বরাবরই মর্মস্পর্শী। যেমন জ্ঞানে ভারী, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সেসব বাণী। আর নবি আলাইহিস সালামদের, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের, সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের, সালাফদের বাণী পড়তে আমার সমসময়ই প্রচণ্ড ভালো লাগে। তাই এই বইয়ে পাতায় পাতায় সালাফদের বাণী পাওয়াটা বইটাকে অনেক বেশি উপভোগ্য করে তুলেছিল আমার কাছে। 

বইটা মূলত নিজেকে রিমাইন্ডার দেয়ার জন্য পড়া। সুন্দর করে গোছানো লেখা, অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া কথার গাঁথনি আর মাঝারি সাইজের বই- সব মিলিয়ে বইটা পড়ে আমার আত্মা আসলেও একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে।

অনুবাদ

আরিফ আবদাল চৌধুরী পারদর্শিতার সাথে বইটির অনুবাদ করেছেন। তাই একটুও বিরক্তি ধরেনি পড়ার সময়। 

বইটি কারা পড়বেন

প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই বইটি পড়া। কারণ বর্তমানে আমরা হন্যে হয়ে ছুটছি দুনিয়ার পিছে। আখিরাতকে খুবই কম গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা । বইয়েরই একটা উক্তি তাই বলতে হয়, 

ইয়াহইয়া ইবনু মুআয রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন-

“হে আদম সন্তান, তুমি এই দুনিয়ার জীবনকে পাওয়ার জন্য সেই লোকের মতো চেষ্টা করছ,যার এসব ছাড়া চলবেই না; কিন্তু আখিরাত অর্জনের জন্য তুমি তার মতো চেষ্টা করছ- যার আখিরাতে দরকার-ই নেই”।

তাই নিজেদের মিইয়ে যাওয়া হুশ ফেরানোর জন্য, নফসকে রিমাইন্ডার দেয়ার জন্য অবশ্যই পড়ে ফেলুন “যে জীবন মরীচিকা”।


এগুলোয় কিন্তু শেষ না! উহু, আরো পড়ব তো বই ইংশা আল্লাহ। সামনে আমার নতুন লেখা আসলে notification পেতে অতি অবশ্যই ডানের side bar এ গিয়ে follow option click করে যাবেন। শুকরিয়া।

Happy reading!

Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...