বই রিভিউ #০৩
বই: তিনিই আমার রব (৪র্থ খণ্ড)
লেখক: শাইখ আলি জাবির আল-ফাইফি
বই: তিনিই আমার রব (৪র্থ খণ্ড)
লেখক: শাইখ আলি জাবির আল-ফাইফি
ভাষান্তর: আব্দুল্লাহ মজুমদার
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৮
সমকালীন প্রকাশন
তিনিই আমার রব। কিন্তু কে তিনি? সুন্দরতম নামের অধিকারী এক মহান সত্ত্বা। কুর'আন ও হাদিস থেকে তাঁর নিরানব্বইটি নাম সম্পর্কে আমরা জানতে পারি, যেগুলোকে বলে “আল আসমাউল হুসনা”।
অবিশ্বাসী ,নাস্তিকেরা আল্লাহ তা'য়ালার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ কোনো নতুন কথা নয়। এ হয়ে আসছে সেই অতীত থেকে।
“আর তারা বলে, তার রবের কাছ থেকে তার কাছে কোনো নিদর্শন নাজিল হয় না কেন?” (সুরা ইউনুস, আয়াত ২০)
স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা সেই প্রশ্নের জবাব দেন,
“বলুন, আসমানসমূহ ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তার প্রতি লক্ষ করো” (সুরা ইউনুস, আয়াত ১০১)
কিন্তু দুনিয়ার মোহে, উদাসীনতায় আর বিপুল নিয়ামতে ডুবে থাকায় এই “লক্ষ করা” আর হয়ে ওঠে না। তারই প্রতিকার হিসেবে চিন্তার খোরাক নিয়ে এসেছে এই বই, “তিনিই আমার রব”। ১ম, ২য়, ৩য় খণ্ডের পরে এবার এসেছে ৪র্থ খণ্ড।
বিষয়বস্তু
“তিনিই আমার রব” সিরিজের বইগুলো সাজানো হয়েছে আল্লাহ তায়ালার বিভিন্ন নামকে সামনে রেখে। একেকটা নাম আসে একেকটা অধ্যায় হিসেবে। তারপর আসে সবচেয়ে সুন্দর ও উপভোগ্য বিষয়। তাহলো, সেই নামের মাঝে লুকায়িত জ্ঞানের অন্বেষণ ও তার মর্ম উপলব্ধি করার জন্য লেখকের হৃদয়গ্রাহী নানা ঘটনা ও বিশ্লেষণের অবতরণ।
“তিনিই আমার রব (৪র্থ খণ্ড)” এ আল্লাহ আযযা ওয়াজালের এগারটি নাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনাগুলো খুব বেশি বড় নয় যে একজন পাঠক ধৈর্য হারাবেন। আবার খুব ছোটও নয় যে পাঠকের জ্ঞানের পিপাসা মিটবে না।
এবারের বইয়ে যেই গুণবাচক নামগুলো উঠে এসেছে তাহলো
-আর রহমান
-আল জামিল
-আল ওয়াহহাব
-আল হক্ব
-আল হাকিম
-আল আলিম
-আল ফাত্তাহ
-আল কাদির
-আল ওয়ালি
-আল ক্বউয়ি
-আল বাদি
পাঠ্যনুভূতি
বরাবরের মতোই আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো “আসমাউল হুসনা” নিয়ে পড়াশোনা করা। তাই “তিনিই আমার রব” সিরিজের এ পর্যন্ত প্রকাশিত সবগুলো বইই আমার সংগ্রহে আছে আলহামদুলিল্লাহ।
এই ডিসেম্বরেই প্রথম প্রকাশিত হয় চতুর্থ খণ্ড। সবেমাত্র প্রকাশিত বইয়ের পাঠক হওয়ার আনন্দই অন্যরকম ছিল।
প্রতিবারের মতো এবারও বইটা শেষ করেছি নতুন আশা নিয়ে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে। বইটার পাতায় পাতায় যেনো মুক্তো ঝড়ে। আল্লাহ তায়ালার নামের অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা, জ্ঞান জানলে রবের বিশালতার ভাবনায় যেমন মনটা ভরে ওঠে, তেমনি এক অবর্ণনীয় ভালো লাগা কাজ করে।
প্রতিটি পাতায় নতুন চিন্তা আছে। এই বইয়ে যেমন আছে বিজ্ঞানের কথা দিয়ে আল্লাহ তায়ালার অনুপম সৃষ্টিশৈলীর আলোচনা,তেমনই আছে লেখকের নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে পাওয়া শিক্ষার কথা। আবার কিছু পরেই পেয়ে গিয়েছি আনন্দে বিহ্বল হয়ে যাওয়ার মতো আশা জাগানিয়া বার্তা। সাথে আছে ভয়ের উদ্রেক করতে পারে এমন সতর্কবাণী। এতো কিছুর মিশেলে কোথাও কোনো বাড়তি মনে হইনি। না কোথাও কোনো কমতি লেগেছে আমার কাছে। কমতি এটাই মনে হয়েছে শেষ করে যে, ইশ, বইটা যদি আরো বড় হতো! এই আলোচনা যদি শেষ না হতো!
বইটা এক বসাতে শেষ না করে ওঠা দায়। তাই চার ঘণ্টার মাঝে বইটা পড়া শেষ করে review দিতে বসে গিয়েছি।
অনুবাদ ও বানান
প্রথম মুদ্রণ হলেও বানানের ব্যাপারে প্রকাশনীর সতর্কতার ব্যাপারটা প্রশংসনীয়। তাছাড়া আব্দুল্লাহ মজুমদারের অনুবাদও অত্যন্ত চমৎকার। পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল, এই বইটা যেনো বাংলাতেই লেখা হয়েছিল। ঝরঝরে অনুবাদ।
অবশ্য এক জায়গায় পরপর দুইটা বাক্যের পুনরাবৃত্তি চোখ এড়ায়নি। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে সেটা ঠিক করা হবে ইংশা আল্লাহ।
বইটি কাদের জন্য
সবার জন্য। মুসলিম-অমুসলিম,বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী,সংশয়বাদী সবাইকে এই বইটা পড়ে দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমি।
তবে, যারা হৃদয়ে কাঠিন্য অনুভব করছেন, যারা হতাশা-নিরাশার চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছেন, যারা নিজেদের প্রবৃত্তির লাগাম ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের জন্য বইটা must read. আর যারা আমার মতো “আসমাউল হুসনা” নিয়ে পড়তে অত্যন্ত ভালোবাসেন, তাদের বলব, আর দেরি কেন? জলদি সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন “তিনিই আমার রব (৪র্থ খণ্ড)”। এ যে এক খণ্ড মুগ্ধতার নাম। এক পশলা আশার নাম। এক বুক ভালোবাসার নাম।
আমার নতুন লেখার notification পেতে ডানের side bar এ গিয়ে follow option click করতে ভুলবেন না কিন্তু। শুকরিয়া। Happy reading!
Comments
Post a Comment