বই রিভিউ #০৭
কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ
লেখক: আরিফ আজাদ
বই: কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ
লেখক: আরিফ আজাদ
প্রকাশনী: সত্যায়ন প্রকাশন
পৃষ্ঠা: ১৮১
এতোশত হাজারো বই আর কাজের ভিড়ে যদি আজকে এই গ্রুপেই প্রশ্নটা করা হয় যে কুরআন পড়া শেষ কবে হয়েছে, তাহলে হয়তো প্রায় সবার মুখই কালো হয়ে যাবে। কুর'আন থেকে দূরে থাকার একটা কারণ এটাও যে আমরা অনুধাবন করতে পারি না বা নিজেদের সাথে "RELATE" করতে পারি না। জ্বি, যেই বইটা পড়ে আমরা নিজেদের সাথে relate করতে পারি, সেটা আমাদেরকে চুম্বকের মতো ধরে রাখে। পড়ার পরে মনে হয় "ইশ শেষ হলো কেন বইটা"। কিন্তু আজ জীবনের দিশারী "কুরআন" এর সাথে সেই ভাবখানা আমাদের হয়ে উঠছে না।
এই সমস্যার সহজ ভাষায় সমাধানের পথ দেখাতে কলম ধরেছেন পাঠকমহলে অত্যন্ত পরিচিত লেখক "আরিফ আজাদ"।
বইটা কোনো তাফসীর গ্রন্থ না। বরং লেখকের তাদাব্বুরের ফসল। তাদাব্বুর মানে হলো গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা। লেখক জীবনের বেশ অনেকগুলো ঘটনা, যেগুলো প্রায় সবার জীবনেই ঘটে, এমন ঘটনার সাথে "relate" করেছেন কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনাকে। তাই বইটা কেবল যারা কুরআনের সাথে মহব্বতের সম্পর্ক তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তাদের জন্যই না। বরং যারা কুরআনের সাথে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সময় দিতেও পারেন, তাদেরকে নতুনভাবে বিভিন্ন ঘটনা ভেবে দেখার জন্য চমৎকার ভাবনার খোরাক যোগাবে ইংশা আল্লাহ।
পাঠ্যানুভূতি
প্রথমে লেখককে নিয়ে কয়েকটা কথা বলতে চাই। "আরিফ আজাদ" নামটা আমার কাছে একটা শুভ্র আবেগের আর শ্রদ্ধার স্থান। কারণ "প্যারাডক্সিকাল সাজিদ" এর দুইটা বই পড়েই আমার ইসলামিক বই পড়ার হাতেখড়ি। সাথে ঐ বইগুলোই আমাকে আমার "মুসলিম" পরিচয় নিয়ে গর্ব করা শিখিয়েছিল। প্রথম দিকে আমার পড়া বইগুলো ছিল ইনারই লেখা। যেমন "বেলা ফুরাবার আগে","আরজ আলী সমীপে"। কিন্তু হ্যাঁ, তারপর যখন ইসলামিক জনরার অন্যান্য লেখকের বই ধরলাম, তখন আর আরিফ আজাদ পড়া হয়ে ওঠে না। এটাই হয়তোবা অনেক ইসলামিক নন ফিকশন জনরা পড়া পাঠকের হাল।
আরিফ আজাদ সম্পর্কে আমার আরো যেটা observation, সেটা হলো- কেউ কেউ ইনার খুব বড় fan হয়ে যায়। হতেই পারে একজন মানুষ। কিন্তু কেউ কেউ ব্যাপারটা এমন level এ নিয়ে গিয়ে toxic বানিয়ে ফেলে যে "যে আরিফ আজাদের বই পড়ে না, তার ঈমানে সমস্যা" এমন বলতেও তাদের বাধে না। মনগড়া কথা বলছি না। নিজেই এমন ঘটনা হতে দেখেছি। কেউ কেউ আবার ইনাকে দেখতেই পারেন না। এদের কারো কারো এই দেখতে না পারার কারণ তারা নিজেরাই নাস্তিক (এমন মানুষের সাথেও মোলাকাত হয়েছে আমার), আবার কেউ কেউ ভাবেন যে আরিফ আজাদ হলেন overhyped। আরেক দল আছে, যারা ইসলামিক জনরায় পড়ে কিন্তু আরিফ আজাদকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন। এটাও একদমই ঠিক না। কারণ সবার দাওয়াহ দেওয়ার, লেখনীর ধরন এক হবে না। কেউ আসিফ আদনান ভাই, শামসুল আরেফীন শক্তি ভাইয়ের মতো হবেন আগুন আর কেউ নয়তো আবদুল্লাহ মাহমুদ নজীব ভাইয়ের মতো হবেন বৃষ্টির হিমেল পানি। এই হিমেল পানির দলে পড়েন লেখক আরিফ আজাদ।
জ্বি, এবার বইয়ের কথায় আসলে এটায় বলব, বইটা ছিল যেনো এক পশলা বৃষ্টির পানি। গায়ে লাগলে যেটা শীতশীত করে। আর যার পরশে অন্তরটা হালকা লাগে।
বইয়ে সুন্দর সুন্দর শিরোনামে একেকটা অনুচ্ছেদে জীবনের একেকটা দিক উঠে এসেছে। সাথে উঠে এসেছে সেই দিকের সাথে কোনো এক সঙ্গতিপূর্ণ আয়াত বা কুরআনে বর্ণিত ঘটনা। তারপর সেই ঘটনা নিয়ে চিন্তার স্বচ্ছ-পবিত্র জলাধারে ডুব দিয়েছেন লেখক। সাথে নিয়ে গেছেন পাঠককে।
আমার সবচেয়ে পছন্দের অনুচ্ছেদের কথা না উল্লেখ করে পারছি না। "ঝরা পাতার কাব্য","প্রেমময় কথোপকথন" এই অনুচ্ছেদ গুলো এতো ভালো লেগেছে যে বলার মতো না। "অন্তরে অন্তরে" আর "আলো অথবা অন্ধকার" ছিল অন্যরকম সুন্দর। ভীষণ সুন্দর! আর শেষে বলব, "তোমার প্রতিবেশি করে নিয়ো" অনুচ্ছেদ পড়ে আপনি কেঁদে ফেললে আপনাকে একটুও "অতি আবেগী" বলে মজা করব না। বরং কান্না না পেলেই একটু বেশি অবাক হবো।
শেষমেশ এটায় বলতে হয়, "কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ" বইটার নাম দেওয়াটা প্রচণ্ড রকমের সার্থক।
আমার review পড়তে ভালো লাগলে, follow করতে ভুলবেন না। উপরে ডানের side bar থেকে follow option click করলেই done! শুকরিয়া!
Happy reading!
Comments
Post a Comment