Skip to main content

বই রিভিউ #০৯: এখন যৌবন যার

 


বই রিভিউ #০৯

বই: এখন যৌবন যার

লেখক: শায়খ যুলফিকার আহমাদ নকশবন্দী


বই: এখন যৌবন যার
লেখক: শায়খ যুলফিকার আহমাদ নকশবন্দী
প্রকাশক: উমেদ প্রকাশ
পৃষ্ঠা: ৩৬৮

আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আরশের ছায়াতলে থাকবে। তার মধ্যে একজন হবে এমন এক যুবক, যে তার যৌবন আল্লাহর ইবাদাতে কাটিয়েছে।
 
(সহিহ বুখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১)

বর্তমানে আমাদের শেখানো হচ্ছে এখন যৌবন যার, তার কাজ হলো মাস্তি করে বেড়ানো, পশুর স্তরে নেমে যেকোনোভাবে জৈবিক চাহিদা মেটানো। কিন্তু যৌবনের এই উত্তাল সময়কে ইসলাম প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরার জন্য বলেছে। কারণ ইসলাম একজন মানুষের ভিতরের পশুকে দমিয়ে রেখে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে জীবনের রাস্তা বাতলে দেয়। সমাজকে করে সুন্দর ও নির্মল। নিজের যৌবনকে তাই ইসলামের নীতির অনুগামী করে চালানোর গাইডলাইন সমেত একটা complete manual হচ্ছে "এখন যৌবন যার" বইটি।

প্রথমে কুর'আন ও হাদিসের আলোকে শালীনতার ব্যাখ্যা দিয়ে বইটা শুরু হয়েছে। তারপর প্রাসঙ্গিকভাবে একে একে এসেছে শালীনতা রক্ষার দুনিয়াবী ও আখিরাতের সুফল, শালীনতার বিপরীত অর্থাৎ বেহায়াপনার ব্যাপারে কুর'আন, হাদিসের অবস্থান, বেহায়াপনার কুফল। 

বইটায় যে ধারাবাহিতা ধরে রাখা হয়েছে, সেটা আলাদাভাবে নজর কাড়ে। ব্যভিচারের প্রথম শুরু হয় কুদৃষ্টি দেওয়া থেকে। আর আমাদের শরীয়াহর সৌন্দর্য হলো, যেকোনো বড় গুনাহে পৌঁছাতে যে পথগুলো বিদ্যমান, সেই সব পথকেই বাতিল করে দেয়। তাই কুদৃষ্টি ইসলামে হারাম। শালীনতা, বেহায়াপনার আলোচনার পরেই এসেছে কুদৃষ্টি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা যেখানে বিশদভাবে কুদৃষ্টির কুফল,  এ থেকে বেঁচে থাকলে যেসব পুরষ্কার অর্জিত হবে তার বিবরণ, কুর'আন ও হাদিসের আলোকে কুদৃষ্টির চিকিৎসা, লেখকের পরামর্শ সবই উঠে এসেছে। আসলে একেকটা টপিকের under এ কোনো point ই বাদ যায়নি।

পর্দার অধ্যায়ে এসেছে সতর, কুর'আন, হাদিসে পর্দার হুকুম, পর্দার তিন স্তর, খাস পর্দা আসলে কিভাবে করা উচিত, মুখ ঢাকার স্বপক্ষে দলিল, বেপর্দা থাকার পরিণতি ইত্যাদি বিষয়।

তারপর ব্যভিচারের উপকরণ, ব্যভিচারের প্রকার, ব্যভিচারের কুফল, শাস্তি। বিবাহিত ব্যভিচারের রজমের শাস্তি নিয়েও আলোচনা এসেছে। যেখান থেকে জানা যায় যে কিভাবে রজম করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। যদিও সেই আলোচনা খুবই সংক্ষিপ্ত, তবে basic concept জানা যাবে। রজমের বিধান কি অমানবিক নাকি ইনসাফের ধারক, সেই ব্যাপারেও লেখক লিখতে ভুলে যাননি।

 কেবল সমস্যা আর তার ভয়াল শাস্তি উল্লেখ করেই যে লেখক ইস্তফা নিয়েছেন,তা একেবারেই নয়। আছে নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটা নিয়ে নবম অধ্যায় আর সবশেষে আছে এক প্রশান্তিদায়ক অধ্যায়, তাওবা নিয়ে। কারণ যে নিজেকে সংযত রাখতে পারেনি কোনোভাবে, কোনোভাবে ভুল করে ফেলেছে, সে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার জন্য যখন বইয়ের শেষে এসে এই অনুচ্ছেদ পড়বে, তখন নিরাশ হবে না। বরং একবুক আশা নিয়ে সে তার রবের দিকে ফিরে আসবে তাওবা করে।

এভাবে দশটা অধ্যায়ে ভাগ করে একেবারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জরুরি আলোচনা রাখা হয়েছে "এখন যৌবন যার" বইয়ে। একজন যুবক বা যুবতী যেনো নিজের যৌবনকে উত্তমভাবে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় ব্যয় করার পূর্ণ দিকনির্দেশনা পেয়ে যায়, তাই লেখক ছোট detalis ও বাদ রাখেননি উল্লেখ করা থেকে। তাই স্বাভাবিকভাবে কলেবরে বড় হয়েছে। 

পাঠ্যানুভূতি 


এই বই কবে শেষ করতে পারব, সেই ভয়েই ছিলাম। একবার ধরে ছেড়ে দিয়ে আবার পড়া শুরু করার সময় ভেবেছিলাম যে, একে তো ননফিকশন, তার উপরে এতোগুলো পৃষ্ঠা। পুরো একমাস লাগিয়ে ভাগ ভাগ করে পড়ব। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ মাত্র ১২ দিনে পুরো বইটা পড়ে ফেললাম। 

বইটা বর্তমান জামানার আলেমের লেখা। তিনি হলেন শায়খ যুলফিকার আহমাদ নকশবন্দী। এই জামানার মানুষ হওয়ায় চমৎকারভাবে আমাদের day-to-day life এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমস্যা ও তার সমাধানের কথা তিনি লিখেছেন। তাই ভার্সিটি পড়ুয়া জীবনে আল্লাহর পছন্দনীয় পথে চলার দিকনির্দেশনা আমি বইয়ে পেয়েছি। কিভাবে গাইরে মাহরামের (যার সাথে শরীয়াহ মতে বিয়ে হালাল) সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে রাস্তায় চলাচল নিয়েও উপদেশ পেয়েছি। উপদেশগুলো লেখকের মনের মতো না কিন্তু। সেগুলো এসেছে কুর'আন ও সুন্নাহর আলোকে। 

"এখন যৌবন যার" বইয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে কুদৃষ্টি নিয়ে আলোচনা আগে করা হয়েছে। এটা উল্লেখযোগ্য বলার কারণ বর্তমানে আমাদের একটা constant অভিযোগ থাকে যে হুজুররা নাকি কেবল মেয়েদেরকেই পর্দা করতে বলে। ছেলেদের ব্যাপারে চুপ থাকে। কিন্তু বইয়ে শালীনতা ও বেহায়াপনার আলোচনার পরে প্রথমেই এসেছে কুদৃষ্টির আলোচনা। এটা অবশ্যই যুক্তিসংগত। কারণ ব্যভিচারের প্রথম ধাপ হলো কুদৃষ্টি আর সুরা নুরে নারীর পর্দার আয়াতের আগে নাজিল হয়েছিল পুরুষের দৃষ্টি অবনত করার আয়াত। আমি মনে করি বইয়ের এই বৈশিষ্ট্য সবার চোখে পড়ার মতো। বিশেষত মেয়েদের। সেই কুদৃষ্টির আলোচনা পড়লে যেকেউ এটা স্বীকার করতে রাজি যে হকপন্থি আলেমরা ছেলেদেরকেও খুব কড়াভাবেই দৃষ্টির হেফাজতের কথা বলেন।

একজন মেয়ে শারীয়াহ সমর্থিত পর্দার ব্যাপারে জানতে পারবে এই বই থেকে। কারণ বর্তমানে আমরা কেবল মাথা কোনোমতে ঢাকাকেই পর্দা করা ভাবি। যেটা সত্যিকার অর্থে চরম ভুল। একজন মেয়ের পর্দা যে কেবল মাথায় একটা ওড়না দিয়ে রাখার চেয়েও ব্যাপক, সেটা জানা যাবে বইটা পড়ে।

ব্যভিচারের উপকরণ অধ্যায়টা সবচেয়ে বেশি জরুরি আমাদের জীবনে চলতে ফিরতে। তাই কারো কাছে যদি এই বই থাকে আর কোনো এক কারণে এখনও পড়ে উঠতে না পারেন, তবুও বলব, উপকরণের অধ্যায়টা পড়ে ফেলবেন।

প্রচ্ছদ নিয়ে না বললেই নয়। এটা দারুণ লেগেছে আমার কাছে। আমার মতে, Youth বা যৌবনকে সবুজ রঙ দিয়ে represent করা হয় বলে উমেদ প্রকাশ সেই রঙ ব্যবহার করে প্রচ্ছদ তৈরি করেছে। ভিতরের print, font সবই মানানসই। 

বইটা শেষ করতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে। আমার এক বোনের recommendation এ বইটা কিনেছিলাম আর সত্যিকার অর্থে বইটা আসলেও চমৎকার। যদিও খটমটে নন ফিকশন একটা বই। কিন্তু যেকোনো মুসলিম যুবক-যুবতীর জন্য এটা must read যদি সে তার যৌবন বা youth কে maximum utilise করে নিশ্চিত করতে চায় কিয়ামতের দিনে আল্লাহর আরশের ছায়া।


সামনে আমার লেখা review পড়তে উপরে ডানের side bar থেকে follow option click করতে ভুলবেন না কিন্তু। শুকরিয়া!

Happy Reading 


Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...