Skip to main content

বই রিভিউ #০৬: হুজুর হয়ে হাসো কেন?


বই রিভিউ #০৬

 হুজুর হয়ে হাসো কেন?

লেখক: "হুজুর হয়ে" টিম


বই: হুজুর হয়ে হাসো কেন?

লেখক: "হুজুর হয়ে" টিম

প্রকাশনী: সত্যায়ন প্রকাশন

পৃষ্ঠা: ১২০


মুচকি হাসা সুন্নত। হাসতে হলে তো একটা উপকরণ বা কারণ লাগবে। বর্তমানে অশ্লীলতা ছাড়া হাসির জোকস পড়তে পাওয়া প্রায় দুর্লভ। আবার আরেক ঝামেলা হলো আপনি যদি একটু দ্বীন মেনে চলেন। তাহলে আপনি যদি সারাদিন কেবল কুর'আন নিয়ে বসে না থেকে, জায়নামাজে দু'আয় পড়ে না থেকে দরকারে ফোনও চালান, তো একদল বলবে "হুজুর হয়ে ফোন চালাও কেন?" ফেসবুকে জরুরী কাজ করছেন, এসে বলবে, "হুজুর হয়ে ফেসবুকিং কর কেন?" হাসতে দেখলেও আপনাকে বলবে, "হুজুর হয়ে হাসো কেন?" জ্বি, এমন প্রেক্ষাপট থেকেই বইয়ের নামকরণ।  কিন্তু যারা একটু-আধটু করে দ্বীনের দিকে ঝুঁকছে, তাদের কি আসলেও হাসা বারণ? মুচকি হাসা তো সুন্নাত আগেই বললাম। তাদের একটু হালাল উপায়ে হাসিয়ে আশেপাশের মানুষের থেকে এই "হুজুর হয়ে হাসো কেন" আধো ঝাঁঝালো মন্তব্য শোনাতেই "হুজুর হয়ে" টিমের এই বই।

"হুজুর হয়ে" টিমের ফেসবুক পোস্টগুলো ব্যাপকভাবে সমাদৃত হলে তারা লেখাগুলো মলাটবদ্ধ করার কঠিন কাজে লাগে। তারপর চলে আসে বইটা। বইয়ে তিনটা ভাগ আছে। সেগুলো নিয়ে একটু বলি। Spoiler না। পড়ার আগ্রহটা আরেকটু বাড়িয়ে দিতেই হালকা hints দিচ্ছি।

প্রথমে আছে "বিটিভি সমগ্র"। জ্বি, আমাদের সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখে আসা বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও তার চরিত্রগুলো নতুন রূপে হাজির হয়েছে "হুজুর হয়ে হাসো কেন" বইয়ে। এখানে লাল মিয়াকে হালকা আরবির আদলে "আহমার মিয়া" বলে ডাকা শুরু করছে হালুম। শিখু দ্বীনের কিছু বিষয় শেখাচ্ছে ইকরি, টুকটুকিকে। জ্বি, আমাদের শিশিমপুর এটা। ওদিকে রাজু বড় হয়ে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এখন প্রায় হুজুর। অনেককিছু জানে সে। পারুল, বাউলও আছে কিন্তু। হিমুও আছে। সাথে আছে আজওয়া খেজুর।

তারপর নাটিকা ভাগে আছে ছুটি আর ওদিকে এক গায়ক ও হুজুরের কথা। বেচারা গায়ক কিছু গাইলেই হুজুর ছাদ ভেঙে নয়তো মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে সেই গানের ইসলামিক parody বানিয়ে ফেলে। গায়কের তাই শান্তি নেই।

সবচেয়ে চমৎকার অংশ হলো ফুলান সিরিজ। "হুজুর টিভি" র রিপোর্টার আবু ফুলান ও ক্যামেরাম্যান ইবনে ফুলান মিলে নানা adventure করে বেড়াচ্ছে। প্রতিটা ডে যেমন নববর্ষ, এপ্রিল ফুল ডে, হ্যালুইন, ভ্যালেন্টাইনস ডে ইত্যাদি সবখানে তারা রিপোর্ট করতে হাজির। সেখানে তারা পড়ছে নানা ঘটনার মুখে আর হচ্ছে একেকটা রিপোর্ট। বাদ যাচ্ছে না কুরবানীর আগে পশুপ্রেম জেগে ওঠা নিয়ে টক শো বা হ্যাপি নিউ ইয়ারে বাঙালি মুসলমানের নাচানাচি।

তাদের রিপোর্ট দিয়েই শেষ হয় বইটা।


পাঠ্যানুভূতি:


অনেকদিন থেকেই বইটা কেনার ইচ্ছে ছিল আমার। ইসলামিক বইয়ের মধ্যে comedy জনরার বই প্রায় নেই বললেই চলে। অন্তত বাংলা ভাষায়। তারপর এই বইটা আসলেও অনেক জনপ্রিয়। তাই অনেকদিন যাবৎ wishlist এ থাকার পর আমার এবারের বইমেলা থেকে কেনা হয়েছে বইটা। তার উপরে এবারই ছিল আমার প্রথম একুশে বইমেলায় যাওয়া।

হালাল বিনোদনের স্বাদ আসলেও অন্যরকম চমৎকার। ছোটবেলা থেকে খুব বেশি চেনা চরিত্র যেমন ইকরি, টুকটুকি,হালুম, শিখু, মিনা, রাজু, হিমু ইত্যাদি এদেরকে নতুন ঢঙে দেখতে খুবই ভালো লেগেছে। আর প্রতিটা লাইনই হাসি পাওয়ার মতো।

সবচেয়ে উপভোগ করেছি "ফুলান সিরিজ"। এর উপরে কোনো কথা হবে না। হাসি পাওয়ার মতো বলে তো ভালো লেগেছেই। কিন্তু তার থেকে বেশি যেটা ভালো লেগেছে আর যেটা প্রশংসার দাবিদার, তা হলো এই হাসির ছলে, ফুলান সিরিজে প্রতিটা ডে'র পিছনের ঘটনা উন্মোচন করা হয়েছে। যেমন এপ্রিল ফুল ডে যে আসলে দেবী সিবিলির পুজার ঘটনার মতো প্যাগান origin থেকে আসছে, সেটা এই বই পড়েই জানতে পেরেছি। আগে জানতাম না। তারপর হ্যালুইন যে এসেছে সেল্টিকদের সাউইন আর ওদিকে অল হ্যালো'জ ডে এর ভুনাখিচুড়ি থেকে সেটাও এই "ফুলান সিরিজ" থেকেই জানা। ব্যাপারটা খুবই চমৎকার যে নেহাত হাসানোর জন্য কিছু ফাঁকাআওয়াজ নেই এখানে। হাস্যরসের সাথে সাথে পাঠককে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে কিভাবে এইসব দিনগুলো বিধর্মীদের থেকেই এসেছে। 

তাছাড়া তিন হুজুর, মাওলানা বাতেনী আমিন, শাইখ রাফি ইয়াদাইন ও মৌলভি নুরনবীর দাড়ি ধরে টানাটানিও আপনি enojoy করবেন। গ্যারান্টি!

 শেষমেশ এটাই বলব যে, এক বসায় পড়ে মন ভালো করার মতো বই হলো ১০/১০ মানের "হুজুর হয়ে হাসো কেন"।


Review পড়ে ভালো লাগলে সামনে আমার লেখা পড়তে উপরে ডানের side bar থেকে follow option click করে দিয়েন। শুকরিয়া!

Happy reading! 

Comments

  1. মাশা আল্লাহ। কথা গুলো সময় উপযোগী, তথ্যবহুল। আর আপনার বলা ও বুঝানোর ধরন সর্বসাধারণের জন্য উপকারী।
    আপনি এই জাতির এক মূল্যবান রত্ন। আমাদের মতো জেনারেল - দুনিয়াবী শিক্ষার্থীদের আইডল এবং প্রতিনিধি।

    আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি 💖

    ReplyDelete
    Replies
    1. জাযাকিল্লাহু খইরন। এতো বেশি প্রশংসা আমি deserve করি না। সবই আল্লাহ তায়ালার রহমত যে তাঁর ইচ্ছায় আপনি বা আপনার মতো অন্য কেউ আমাকে নিয়ে এমন সুধারণা রাখছেন। দু'আ করবেন আমার জন্য।
      -Kitabwali20

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বই রিভিউ #০১: সংশয়বাদী

  বই রিভিউ #০১ বই:সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু    বই: সংশয়বাদী লেখক: ড্যানিয়েল হাকিকাতযু অনুবাদ: আসিফ আদনান প্রকাশনী: ইলমহাউজ পাবলিকেশন পৃষ্ঠা: ২৬৫ আজকের দিনে আমাদের চারপাশে দেখলে দেখব বিভিন্ন মত, আদর্শের (ideology) র জগাখিচুড়ি। এতোশত "Ism" যে গুণে শেষ করা দায়। Ism এর লেজ লাগানো শব্দগুলো কিন্তু আবার খুব eye catching। যেমন Feminism, Liberism, Harm principle, Nihilism, Modernity ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কেবল এইসব চটকদার শব্দের উপরের মোড়ক দেখে ভাসাভাসা বুঝে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে হয়ে যায় এইসব মতাদর্শী। আর এই প্রত্যেকটা মতই একেকটা ideology নিয়ে ঘুরে। পুরো একটা দর্শন, একটা worldview দেয়। কিন্তু আমরা ভাবি এইগুলো কেবল কিছু "ভালো" আদর্শ। মামুলি ব্যাপার!   প্রতিটা "ism" যেহেতু একেকটা worldview দেয় আর ওদিকে ইসলাম একটা পরিপূর্ণ দ্বীন বা worldview, তাই ইসলামের সাথে এইসব "ism" এরই দ্বন্দ্ব বাঁধে। কারণ "ism" গুলোকে যতোই নিদেনপক্ষে নিরীহ লাগুক না কেন, আসলে সেগুলো পুরো দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের মেনে নেওয়ার দাবি করে। এদিকে জীবনের প্রতিটা ছোট-বড় কাজ, রা...

বই রিভিউ #০৮: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক

  বই রিভিউ #০৮ বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ) প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন পৃষ্ঠা:২২৪ ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।  যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ? আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে ...

সাজিয়ে ফেলুন জিলহজ্জের প্রথম দশদিন

  সাজিয়ে ফেলুন  জিলহজ্জের প্রথম দশদিন Plan your first decade of Dhul Hijjah #Spiritual  দেখতে দেখতে চলে আসছে জিলহজ্জ্ব মাস। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই মাস জুনের ৭ নাকি ৮ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে। জিলহজ্জ্ব বা যুল হিজ্জার প্রথম দশদিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিয়ে কুর'আন ও হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। এই দশ দিনের মর্যাদা খুব ছোট করে উল্লেখ করছি। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা: সুরা আল-ফাজরের শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা দশ রাতের কসম খেয়ে বলেছেন, কসম ভোরবেলার, কসম দশ রাতের। (সুরা ফাজর, আয়াত ১,২) ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে, এই দশ রাত বলতে জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।  হাদিসের ভাষায় এই দশ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদিসে এসেছে, এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন দিন নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও ...