বই রিভিউ #০৫
শেষের অশ্রু
লেখক: দাঊদ ইবনু সুলাইমান উবাইদি
শেষের অশ্রু
লেখক: দাঊদ ইবনু সুলাইমান উবাইদি
প্রকাশনী: সন্দীপন প্রকাশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১০০
বাগদাদের এক যুবক ইয়াসার। মসজিদের সাথে যার আত্মা জুড়ে আছে। সবাই তাকে চেনে তার দুনিয়া বিমুখতার জন্য। বলে, “ওর শরীর পৃথিবীতে থাকলেও ওর আত্মা আকাশে উঠে গেছে”।
সারশীর ঘরে নিত্যদিনের জলসায় ওঠে সেই ইয়াসারের কথা। এক হাজার দিনারের বিনিময়ে সেই জলসায় ইয়াসারকে টেনে আনার চ্যালেঞ্জ নেয় সারশী। আবু মাহমুদ দুঃস্বপ্ন বোনে সেই জান্নাতে চলে যাওয়া এক জীবিত আত্মাকে নিজ হাতে সরাব খাওয়ানোর। হ্যাঁ, ইয়াসারকে নিজ হাতে সরাব খাওয়াবে সে!
গল্পের ইয়াসার তার জানাশোনা সবার কাছে উদাহরণ। বাবা-মায়ের গর্ব সে। তাকে দেখলে মনে হয় তার চেহারা থেকে নুর ঝরে পড়ছে। সারশীর দাস, ইরিদ যখন সারশীর প্রথম অস্ত্র নিয়ে তাকে ঘায়েল করতে যায়, তখন ইয়াসারকে দেখে লজ্জিত হয়। লজ্জিত হয় এমন পবিত্র মানুষকে অপবিত্রতার রাস্তায় টেনে আনার ষড়যন্ত্রে সামিল থাকার জন্য। এমনই এক যুবক ইয়াসার।
কিন্তু নারীর ফিতনা যে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর! প্রায় প্রতিদিন সারশী আর ইয়াসারের রাস্তা মিলে যাওয়া, রাস্তায় আকস্মিক দেখা হওয়া, এগুলো সব সারশীর ইয়াসারকে বিচ্যুত করার ফন্দি ছিল মাত্র।
এদিকে বেচারা ইয়াসার বুঝতে পারে তার অন্তরে ময়লা জমছে। সে ছটফট করতে থাকে। নিজের বাসা থেকে বের হলেই কীভাবে কীভাবে যেনো ইয়াসার পৌঁছে যেতো সারশীর বাড়ির দরজায়! কিন্তু এভাবে কতদিন?
বেশিদিন যেতে হলো না। সারশীর বাড়ির সেই জলসায় নিজে থেকে আসল ইয়াসার! তারপর?
তাহলে শেষে কি চ্যালেঞ্জে জিতে গেল সারশীর? আবু মাহমুদের সেই ইচ্ছা কি মিটেছিল? জানতে হলে ডুব দিতে হবে “শেষের অশ্রু”র পাতায়।
পাঠ্যনুভূতি
আমার বোন প্রতি আপুর লোভ ধরানোয় exam এর কথা ভুলে টানা ২ ঘণ্টা বইটার মাঝে বুঁদ হয়ে ছিলাম। সে অবশ্য শনিবারের কথা।
বইটা অসম্ভব রকমের সুন্দর। কিছু জিনিস দেখলে “শুভ্র”, ”শুভ্র” vibe কাজ করে। এই বইটাও ঠিক তাই। পাতাগুলো যেনো শুভ্রতা ছড়াচ্ছে! পাতাগুলো অবশ্য না। বইয়ের শব্দগুলো।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক দ্বীনদার ভাইবোন আছেন বা ছিলেন, যারা ছিলেন অন্যদের জন্য দ্বীনের পথে অনুপ্রেরণা, সবার জন্য উদাহরণ। কিন্তু জীবনের কোনো এক বাঁকে এসে তারাই কেবল কোনো এক "দর্শনধারী” বিপরীত লিঙ্গের মানুষের চোখে নিজের সর্বনাশ দেখে সেদিকেই ছুটে গেছে, যেমন ছুটে যায় পতঙ্গ আগুনের দিকে। শেষ পরিণতি দুটো ক্ষেত্রেই এক। জ্বলে শেষ হয়ে যাওয়া।
এমন ঘটনার চাক্ষুস অভিজ্ঞতা থাকায় বইটা আমার কাছে প্রচন্ড জীবন্ত লেগেছে।
গল্পের ইয়াসার আমরাই। হয়তো এক বোন সব ছেড়ে অনেক দূর চলে গেছেন কোনো Handsome ছেলের চোখের মায়ায় বিদ্ধ হয়ে। কোনো ভাই আরো নিজেকে অন্ধকারে ডুবাচ্ছেন কারো বেণীর দুলুনির সাথে। এদের সবার জন্য এক আলোকবর্তিকা এই “শেষের অশ্রু”।
বর্তমান সময়ের teenagers এর জন্য বইটা must read। কারণ:
১. এই বইয়ে উঠে এসেছে বিপরীত লিঙ্গের ফিতনায় ছটফট করতে থাকা এক আখিরাতমুখী মানুষের কথা। যার এমন নারী ফিতনায় পড়ে অধঃপতনে যাওয়ার কথা কেউ কখনো ভাবতে পারেনি। বইটা তাই যেনো বলে, জান্নাতে পা না রাখা অবধি ভেবে বসো না তুমি জান্নাতে পৌঁছে গেছো। আর যতোই ইবাদাতগুজার হই না কেনো শয়তানের আক্রমণ থেকে আমরা কখনোই পুরোপুরি নির্ভয় থাকতে পারি না।
২. বইয়ে উঠে এসেছে সৎসঙ্গ থাকার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা। যখন ইয়াসার নিজেকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলতে বসেছিল, তখন তার হুশ ফেরে তার মসজিদের শাইখের দেয়া ছোট্ট চিঠির কথায়। মসজিদে তার বন্ধুদের মুখ তার সামনে ভেসে ওঠে সেই সঙ্গিন মুহূর্তে।
৩. গল্পের শেষের সুন্দর সমাপ্তি বলে যায় যখনই তুমি বুঝবে যে তোমার ভুল হয়েছে, তখনই সময় রবের কাছে দৌঁড়ে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়ার চোখের নোনাজলে ভিজে ভিজে।
শেষে এক কথায় আমার সমস্ত লেখা ভরে দিতে বলতেই হয়, বইয়ের নামটা সত্যিই মানিয়েছে। সার্থক “শেষের অশ্রু” নামকরণ। অত্যন্ত চমৎকার একটি বই।
Happy reading!
সামনে আরো আসবে কিন্তু লেখাজোখা ইংশা আল্লাহ। তাই notification পেতে অবশ্যই ডানের side bar এ গিয়ে follow option click করতে ভুলবেন না। শুকরিয়া!
Comments
Post a Comment