বই রিভিউ #১১
বই: লেজেন্ডস অব ইসলাম ১
মূল: শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল
বই: লেজেন্ডস অব ইসলাম ১
মূল: শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল
প্রকাশক: চেতনা প্রকাশনী
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৫৯
ইসলামের ইতিহাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কেবল চার খলিফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের সময় গিয়ে থেমে যায়নি। আমাদের জানার কমতি বিস্তর। তাই তো আমরা জানি না এর পরেও বিভিন্ন শতাব্দীতে এসেছে একেক কিংবদন্তি। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনা করেছেন শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল তাঁর অডিও সিরিজ "লেজেন্ডস অব ইসলাম" এ। সেই সিরিজের লিখিত রূপ দিয়েছেন চেতনা প্রকাশন। অনুবাদ করেছেন আম্মারুল হক।
প্রথমে শুরু হয় সুলতান নুরুদ্দিন মাহমুদ জিনকি রাহিমাহুল্লাহকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে। এক বীর যোদ্ধা। কিন্তু যুদ্ধ ক্ষেত্রে এই অকুতোভয় বীর কেবল শত্রুর মনে ত্রাসই সৃষ্টি করেননি। তিনি একইসাথে ছিলেন আলেম। এক ইবাদাতগুজার ব্যক্তি, আলেম, সুন্নাহর প্রতি দরদি। যেদিন জেনেছিলেন যে তাঁর তলোয়ার রাখা আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তলোয়ার রাখা ভিন্নভাবে হচ্ছে, সেদিনই নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমরের যেদিকে যেভাবে তলোয়ার রাখতেন, সেভাবে তলোয়ার ঘুরিয়ে নেন। তাঁর পুরো সৈন্যদলকে এই কাজ করতে নির্দেশ দেন। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি ছিলেন আলেপ্পো বা তৎকালীন হারেবের গভর্নর। মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জেরুজালেমে মুসলিমরা কষ্টে আছে তাই জীবনে কখনো হাসাহাসি করেননি। তাঁকে দিয়েই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা রক্ষা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র মৃতদেহ অপহরিত হওয়া থেকে।
জেরুজালেম জয়ের স্বপ্ন বুকে নিয়ে নুরুদ্দিন জিনকি রহ মারা যান। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে আসেন তাঁর সৈন্যদলের এক বীর সৈনিক। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি রহ।
সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি রাহিমাহুল্লাহকে আমরা কেবল জেরুজালেম জয়ের জন্য চিনলেও তাঁর আরো অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ আছে। তিনি মিশরের গভর্নর হিসেবে শাসনভার পাওয়ার পরে তিনি মোকাবিলা করেন শিয়া গোষ্ঠীর প্রোপাগান্ডা। এভাবে ইলমের ময়দানেও অবদান রেখেছেন এই আলেম।
আছে বীর উকবা ইবনে নাফে রাহিমাহুল্লাহর কথা। যার হাত দিয়ে ইসলামের আলো পৌঁছে গিয়েছিল পুরো আফ্রিকায়। তাই তো আজ আফ্রিকার অনেক দেশ মুসলিম।
এই আলোচনায় এসেছে সাইফুদ্দিন কুতুজের কথা। যিনি সেনাপতি কিবতুগার বাহিনীকে পরাজিত করে মোঙ্গলদের তাড়িয়ে দেন।
সবশেষে এসেছে সুলতান মাহমুদ আল-ফাতিহের বীরগাঁথা। তিনি জয় করেছিলেন সেই অজেয় নগরী কনস্টান্টিনোপল, যা আজকে তুরস্কের রাজধানী। তিনি সত্যায়ন করেছেন নবি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী। এভাবে বীরদের শৌর্যবীর্যের গল্প শুনিয়ে ও সেই গল্প থেকে শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করে করে শেষ হয় বক্ষ্যমাণ বইটা।
পাঠ্যানুভূতিঃ
ইতিহাস পড়ার প্রতি আমার প্রবল এক আগ্রহ কাজ করে। ইসলামি ইতিহাসের প্রতি এই আগ্রহটা আরো বেশি। সেই থেকেই বইটা পড়া।
উপরে যেই বীরদের নাম বলা হয়েছে, সত্যি বলতে সালাহুদ্দিন আইয়ুবি রাহিমাহুল্লাহ আর সুলতান মুহাম্মদ আল-ফাতিহর নাম বাদে আর কাউকে চিনতাম না। এটায় বর্তমানে মুসলিমদের অবস্থা। আমরা নিজেদের ইতিহাস জানি না। আর জানি না বলেই নিজেদের পরিচয় নিয়ে আমাদের এতো হীনমন্যতা।
বীরদের গল্প মানেই সেখানে যুদ্ধের দৃশ্য আসবে। স্বাভাবিকভাবে এসেছেও। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো উপরের সব বীরেরা যুদ্ধের ময়দানেও দু'আ করতেন। নুরুদ্দিন মাহমুদ জিনকি রাহিমাহুল্লাহর যুদ্ধ জয়ের সময় দু'আটা পড়লে যে কারো মনে দাগ কাটবে। তিনি আল্লাহর কাছে মুসলিম বাহিনীর জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন আর নিজেকে বলেছিলেন "মাহমুদ তো একটা কুকুর"। এভাবেই এই বীরেরা রবের সামনে নিজের তুচ্ছতা তুলে ধরতেন। মৃত্যুর সময় ইনাদের সঞ্চয় কিছু ছিল না বলতে গেলে। যা থেকে বোঝা যায় কেমন সাদামাটা জীবনযাপন করতেন তারা।
তাছাড়া শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের হৃদয়স্পর্শী আহবান, বক্তৃতা ও উপদেশ যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। অনুবাদও অনেক ঝরঝরে। তাই পড়তে একটু কষ্ট হয়নি।
যারা থ্রিলারপ্রেমী, আমি চাই তারা ইসলামের বীরদের জীবনী পড়ুক। এখানে আপনারা সত্যিকারের লোমহর্ষক যুদ্ধের বিবরণ যেমন উপভোগ করতে পারবেন, তেমনই নিজের ইতিহাস সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।
সবশেষে বলব, আমার খুব প্রিয় বইগুলোর তালিকায় নতুন এড হলো "লেজেন্ডস অব ইসলাম ১" বইটি।
Comments
Post a Comment