বই রিভিউ #০৮
বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক
লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন
বই: কষ্টিপাথর-২: মানসাঙ্ক
লেখক: ডা.শামসুল আরেফীন (ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজ)
প্রকাশক: সন্দীপন প্রকাশন
পৃষ্ঠা:২২৪
ধর্ষণ সমাজের এক অন্যতম ব্যাধি। যার প্রতিকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতিচ্য, প্রতিটা সমাজ। সেক্যুলার world দিচ্ছে একেকটা নতুন উপায় বাতলে ধর্মের দেখানো পথ থেকে বেরিয়ে। কিন্তু তাতেও তো কমছে না এই রোগ। প্রায় প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কমপক্ষে একটা ধর্ষণের খবর চোখে পড়বেই।
যেকোনো ধর্ষণের ঘটনার পরে দুইদলের আবির্ভাব হয়। একদল কেবল ভুক্তভোগীর পোশাকের দোষ দিয়ে নিস্তারের পথ খোঁজে। কেবল পোশাকই যদি সব গণ্ডগোলের মূল হয়, তবে কয়েকদিন আগের সেই তৃতীয় শ্রেণীর ফুটফুটে বাচ্চার কোন উত্তেজক পোশাকে পিশাচগুলোর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে? এখন তো কুকুর-বিড়াল-গুইসাপও এই ধর্ষণের তালিকা থেকে বাদ যায় না। তাদেরও কি তাহলে পোশাকের দোষ?
আরেকদল কেবল ধর্ষককে, ছেলেদের মেন্টাল সেটআপকে পরিবর্তনের কথা গলা ফাটিয়ে বলে। কিন্তু তথ্য, উপাত্ত ও experiment থেকে উঠে এসেছে যে কেবল ৮% ধর্ষক বাদে বাকি ৯২% হলো মামুলি মানুষ। মামুলি বলতে বোঝাতে চাচ্ছি এদের কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা নেই। কিন্তু এই পচন ধরা সমাজের নীল পর্দা আর সিনেমায় দেখানো নারীর পণ্যায়নে এদের মধ্যে তৈরি হয়েছে রেপমিথ। সাথে আছে নির্দিষ্ট স্থান বা সময়। পাশাপাশি উদ্দীপকের দরকার। এই নির্দিষ্ট মেন্টাল সেটআপ + নির্দিষ্ট স্থান/সময় (যেমন নির্জন জায়গা, গ্রামে ভরদুপুর বা একেবারে ভোরের সময়) + উদ্দীপক, এই তিনটা criteria যদি এক হয় তাহলেই একেকটা দুর্ঘটনা ঘটে। প্রকৃতপক্ষে এই তিনটা রোধ করা গেলে বা তিনটাকে এক হতে না দিলেই ইংশা আল্লাহ ধ!র্ষ)/ণ ঠেকানো সম্ভব।
প্রতিটা মানুষের মনের গোপনে এক অন্ধকার কুঠুরি কাছে, যেটার ব্যাপারে অনেকে নিজেও জানে না। একেকজনের একটা সিম্বল আছে। কি সেই সিম্বল? কাকে বলে sexual symbolism?
সমস্যার বিস্তৃত আলোচনার পরে যখন আমরা তথ্য,উপাত্ত ও গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ডাটা বিশ্লেষণ করব, তখন আমরা দেখতে পাবো যে যেই মহাসত্যকে "সেকেলে, কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমারোহ" বলে জীবন থেকে ঝেটিয়ে বাদ দিতে অতি উৎসাহী, সেই ইসলামেই এসে মিলে যায় সব সমস্যার সমাধান। কি আশ্চর্যের ব্যাপার,তাই না?
পাঠ্যানুভূতি
২০২০ সাল থেকে বইটার ব্যাপারে আলোচনা শুরু পাঠক সমাজে। তখন বইটার কিছু কিছু content এর কথা জেনে পড়ার খুবই আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। এবারের আমার "প্রথম" একুশে বইমেলায় গিয়ে বইটা কিনে ফেলি।
বইটা কেনার পিছে সবচেয়ে বড় কারণ হলো মানুষের এইসব অন্ধকার দিক জানলে নিজেকে অনেকদিক থেকে পাল্টানো যায়। আর আমার মতে, "ছেলেদের মানসিকতার পরিবর্তন চাই" এই বাণী কেবল আউড়ে গিয়ে নিজেকে শিকারের চোখে পড়ার মতো করে চলাফেরা করাটা বিরাট বোকামী। সুবিবেচকের কাজ তো হবে নিজেকেও পাল্টানো নিজের মানসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে।
বইটা যদি পারতাম তাহলে প্রতিটা বোনকে ধরে ধরে পড়াতাম। Must read masterpiece for each and every girl.
বইটা পড়তে গিয়ে কতবার যে reality check খেয়ে আঁতকে উঠেছি! কোনো দায়বদ্ধতা বা আইনের শেকল না থাকলে মানুষ যে আসলে নিদেনপক্ষে "একটা পশু" সেটা বারবার বুঝতে পেরেছি। বইয়েও কথাগুলো উঠে এসেছে। পশ্চিমা বিশ্বের চকচকে মোড়কের নিচে যে পচাগলা জীবনের অস্তিত্ব সেটা জেনে আমার চোখ আসলেও কপালে উঠেছিল। আপনাদেরকে একটা hints দেই। বইটা পড়ার সময় জার্মানের মতো দেশে "Animal brothel" নিয়ে জানতে পারবেন আর সেটার অনুমোদন টিকিয়ে রাখতে যে মানুষ আন্দোলনেও নামতে রাজি, এগুলো পড়লে আপনি ভেবে কুল পাবেন না যে মানবতা বলে কিছু আর দুনিয়াতে আছে কিনা।
বইটা পড়ে human psychology র এক ঘুটঘুটে অন্ধকার দিক সম্পর্কে জেনেছি। যার দরুণ নিজের কিভাবে চলাটা উচিত-অনুচিত তার উপরে একটা solid ধারণা পাওয়া যাবে। কারণ আমরা যতোই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য- ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে মরি না কেন, বাস্তবে আমরা সমাজের বেঁধে দেওয়া গণ্ডির মধ্যেই বেঁচে থাকি। সমাজের offer করা মাত্র দুই-তিনটে option থেকে choose করাকে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে ভাবি। কিন্তু বাস্তবতা আলাদা।
শক্তি ভাইয়ের লেখায় আল্লাহ আরো বারকাহ দিন। তার লেখায় আসলে যে তেজ আছে, সেটা অন্যরকম। ভেবেছিলাম এমন data দিয়ে ঠাসা খটমটে বই হয়তো পড়তে কমসেকম দুইদিন যাবে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ মাত্র ১ দিনেই বইটা পড়া শেষ হয়ে গেলো! বললাম না যে শক্তি ভাইয়ের লেখায় এমন।
শেষে বলব প্রতিটা মেয়ের নিজের ভালোর জন্য, শিকারের থাবা থেকে বেঁচে থাকতে ও নিজেকে বাঁচানোর মতো জ্ঞান জানতে বইটা must read। ভাইদেরও পড়া must কারণ দিনশেষে একজন ছেলেই কোনো এক মেয়ের অভিভাবক। আবার সেই ছেলের মাঝেই লুকিয়ে আছে এক অন্ধকার কুঠুরি। যার অস্তিত্ব সে নিজেই হয়তো টের পায়নি......
সামনে আমার আরো review পড়তে উপরে ডানের side bar থেকে follow option click করতে কিন্তু ভুলে যাবেন না। শুকরিয়া!
Happy reading.
Comments
Post a Comment